দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন পুনর্নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে সরকার। এতে বেতন বর্তমানের চেয়ে কিছু বাড়বে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে বাড়তি অর্থ আদায় করেছে, তা এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমন্বয় করতে বা ফেরত দিতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন। এই বৃদ্ধি ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না বলে আলোচনা আছে। আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আগামী বুধবার রাতে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি ফিরলে আগামী সপ্তাহেই সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কথা বিবেচনা করে যৌক্তিক হারে এই বেতন বাড়ানো হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের পর ইতিমধ্যে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি বেতন নিয়েছে, তাদের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমন্বয় করতে হবে বা ফেরত দিতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। এসব বিষয় তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানাবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে যত মাসিক বেতন আদায় করে, তার চেয়ে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করার কথা তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন।
গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তথ্য সংগ্রহ করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রাপ্য তথ্য অনুযায়ী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তারা নতুন ভর্তির সময়ই জানুয়ারি মাসের বর্ধিত বেতন আদায় করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রবিধানমালা অনুযায়ী, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য বেতন ও ফির হার নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু জাতীয় বেতনকাঠামোর কথা বলে কিছুদিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নামকরা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো মাসিক বেতন বেশি আদায় করছে কিংবা বাড়িয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এখন সরকার এই ফি নির্ধারণ করে দিতে যাচ্ছে।
টাকা নেওয়া স্থগিত করছে স্কুলগুলো: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর ভর্তি বাবদ ব্যাংকে টাকা জমা নেওয়া স্থগিত করছে স্কুলগুলো। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ নোটিশ দিয়ে বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নতুন ও পুরোনো সব ভর্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যাংকে টাকা জমা স্থগিত থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুসারে ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ইতিমধ্যে যারা ভর্তি হয়েছে এবং ভর্তিযোগ্য হয়েও ভর্তি হতে পারেনি, তারাও ক্লাসে অংশ নিতে পারবে। গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বর্ধিত মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি বন্ধের নির্দেশ দেয়।