জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে মন্ত্রণালয়গুলোকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অর্জিত সফলতা ধরে রেখে ভবিষ্যত অগ্রগতি ও প্রশংসা অর্জনে শুরু থকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুচ্ছে চাচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়ন বিষয়ে অর্থাৎ দেশজ ও বৈদেশিক সহায়তা কত প্রয়োজন হবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে এজন্য স্টাডি পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। কারণ এমডিজিতে ভাল করায় বাংলাদেশ চারটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। এজন্য এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশের মধ্যে আমরা স্থান করে নিতে চাই। সে লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই এসডিজি বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা তৈরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন এবং নিয়মিতভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য দাখিল করবে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে জিইডি। এতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে গৃহীত ও গৃহীতব্য কার্যপরিধি তথ্য এ্যাকশন প্ল্যানের রূপরেখা প্রণয়ন করে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে রূপরেখা পাওয়ার পরই এসডিজি বাস্তবায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্ম-কৌশলের রূপরেখা চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা সম্পর্কিত কমিটির অনুমোদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
আরও বলা হয়েছে, এমডিজির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এসডিজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা এসডিজি বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে জিইডি।
এর আগে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) অনুমোদন দেয়া হয়। এটি তৈরির সময় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহকে এর বিভিন্ন অধ্যায়ে সমন্বিত করেছে। বর্তমানে সম্পত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্য এবং অন্তর্গত ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বিত করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে। পরবর্তীতে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে ১৯৩টি সদস্য দেশ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা হিসেবে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি অনুমোদন করেছে।
এর আগে সরকারী উন্নয়ন কর্মকা-ের অগ্রগতি তদারকি করতে বিশেষ অনলাইন টুল তৈরি করেছে সরকার। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি (২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত) অর্জনে সংসদীয় আসনভিত্তিক এই নিবির তদারকি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় তৈরি অনলাইন টুল সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়। এ বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা সফলভাবে এমডিজির লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ঠিক একইভাবে আগামীর জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট হবো। আমরা বিশেষ করে নারী উন্নয়নে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান ও সমতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশই প্রথম কোন দেশ যেটি স্বপ্রণোদিত হয়ে অনলাইন টুল তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন অগ্রগতি সহজে পরিবীক্ষণ করা যাবে। মাঠ পর্যায়ের তথ্যাবলী সরাসরি জেলা প্রশাসকদের তত্ত্বাবধানে সিস্টেমে এন্ট্রি দেয়া যাবে। বিভাগীয় কমিশনার, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও নীতিনির্ধারকরা খুব সহজে এ কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারবেন। এ সিস্টেমের মাধ্য পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিবেদন তৈরি ছাড়াও প্রাপ্ত তথ্যাদির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যাবে।
সূত্র জানায়, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রশংসীয়। এক্ষেত্রে সাফল্যের পাল্লাই ভারি হয়েছে। আটটি লক্ষ্যের মধ্যে অনেকগুলোতেই এসেছে সফলতা। এগুলো হচ্ছে দারিদ্র ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতা কমানো, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, শিশু মৃত্যু কমানো, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইড এবং অন্যান্য রোগব্যাধি দমন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। এক্ষেত্রে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শিক্ষা, দারিদ্র্য হার, স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, সমতা অর্জনসহ এমডিজির বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে নিদিষ্ট সময়ের আগেই ২০১৩ সালে সালে লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। সাউথ সাউথ কো-অপারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত রয়েছে। এমডিজি আমাদের দেশের অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই উদ্যোম টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কাজে লাগবে। তিনি আরও আলেন, গত ১৫ বছরে যেভাবে দারিদ্র্য কমাতে আমরা সক্ষম হয়েছি এতে করে আগামী ১৫ বছরে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যেই দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।