মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা দুই-একজনের নাম ধরে ধরে কখনও বের করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, সারা-পৃথিবীতে এভাবে যে গণহত্যা হয়েছিল, সেটা কখনও একজন দু’জন করে গুনে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। একটা অনুমান ভিত্তিক সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, সারাদেশে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশ আর লাশ ছিল। লাশের মিছিল ছিল। নদীতে, পুকুরে এখানে-সেখানে লাশ ভাসত। গণহত্যার চিহ্ন যেন সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। তখন শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করে পাকিস্তানের অপকর্মকে পাকিস্তান যেভাবে অস্বীকার করে আসছে। সেই পাকিস্তানের অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত একইসুরে তাদের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে। পাকিস্তান যেভাবে বলেছে, একাত্তর সালে তারা এদেশের গণহত্যা করেনি। আজকেও বিএনপিও সেই গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাকিস্তানের সেই বক্তব্য সমর্থন করে যাচ্ছেন।
হানিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এই বিশাল সংখ্যা একজন-দুজনের নাম করে কখনও হিসাব করা যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশে যখন এই রকম গণহত্যা হয়েছিল। জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর দ্বারা ইহুদি হত্যা হয়েছিল, ২০১০ সালে রুয়ান্ডাতে গণহত্যা হয়েছিল, এর আগে আনবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ জাপানে গণহত্যা চালিয়েছিল। এ রকম আরও অনেক গণহত্যা হয়েছে। সেখানে একজন-দুজন হিসাবে করে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। এটা অনুমানভিত্তিক সংখ্যায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। মানুষের মৃত্যুর ধরন দেখে, মিছিল দেখেই হয়তো সংখ্যাটাকে অনুমানভিত্তিকই করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। পাকিস্তানের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে হানিফ বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বিএনপির নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দিতে চাই, ইতিহাস বিকৃতি করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একদিনে হননি। ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের জন্য তিনি সংগ্রাম শুরু করেন। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফার মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধীনতার সোপান রচনা করেছিলেন। ৬৯-এর গণ-অভুত্থানের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। এই স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। এই স্বাধীনতা কোনওি ব্যক্তির এক হুইসেলে আসেনি।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এই ধৃষ্টতা দ্বিতীয়বার না দেখানোর জন্য আমরা অনুরোধ করে যাচ্ছি। জাতির পিতাকে নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করে এই ধৃষ্টতা যদি ভবিষ্যতে কেউ দেখান, তাহলে বাংলার জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না। তাদের সমুচিত জবাব দিয়ে স্বাধীনতা ও ইতিহাস বিকৃতিকারীদের এই বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য উৎখাত করবে।
ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুফতি তাজুল ইসলাম ফারুকী প্রমুখ।