বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ দাবি করেছেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। শনিবার (৯ জুন) পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কারা ফটকের সামনে তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেটা সবচেয়ে বিপজ্জনক মনে করছি, গত ৫ জুন বেলা ১টার দিকে খালেদা জিয়া দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। ৫-৭ মিনিট পর তার জ্ঞান ফিরলেও ওই সময়ের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না তিনি। তার অ্যাটেনডেন্স যে মেয়েটি ছিল সে অনেক চেষ্টা করে তুলে বসিয়েছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, তার টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক) হয়েছে। এটা মাইল্ড স্ট্রোকের মতো। খালেদা জিয়া এখনও যে কথা বলেন, তাতে একটু স্লাইড আছে। যদিও তিনি ভালো কমিউনিকেট করতে পারছেন।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের এই সদস্য আরও বলেন, ‘মাইল্ড স্ট্রোকের ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে বিপজ্জনক তা হলো কারও যদি টিআইএ হয় তাহলে আগামীতে বড় ধরনের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কার আভাস থাকে খুব বেশি। আমরা যারা মেডিক্যাল বোর্ড ও মেডিক্যাল টিম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এসেছিলাম, আমাদের সমস্ত মতামত ও পর্যবেক্ষণ লিখে দিয়ে এসেছি কারা কর্তৃপক্ষকে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চার পাতার একটি মেডিক্যাল প্রতিবেদন দিয়ে এসেছি কারা কর্তৃপক্ষকে। যেখানে উল্লেখ করা আছে, ৫ জুন কী ঘটেছে ও তার কেমন চিকিৎসা প্রয়োজন। কারা কর্তৃপক্ষ এগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলে জানতে পারবেন।’
অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর ভাষ্য, ‘আমরা মনে করি কয়েকটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষা দরকার খালেদা জিয়ার। এর মধ্যে অন্যতম প্রসথেসিস কমফোর্টেবল এমআরআই মেশিন দিয়ে এমআরআই করানো। খালেদা জিয়ার মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তার নার্ভ কন্ডিশন স্টাডিও করতে হবে। যেহেতু ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মাঝে মধ্যে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছেন না, এ কারণে হাঁটলে মনে হয় তিনি পড়ে যাবেন। সেজন্য আমরা বলেছি, এসব সুযোগ-সুবিধা আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। চিকিৎসক হিসেবে তাকে দ্রুত সেখানে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছি। শিগগিরই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।’
শনিবার বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক। তারা বেরিয়ে আসেন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে। অন্য তিন চিকিৎসক হলেন নিউরো সার্জন ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস ও ডা.মামুন রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এর আগেও একবার কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির এই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তখন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্পিকারের বাস ভবনকে সাবজেল ঘোষণা দিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিল তাকে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের এক আদেশে মুক্তি পান তিনি।