বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাওয়ার অপেক্ষায় সারাদেশে বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা হয় তিন শতাধিক দাখিল মাদ্রাসা। হাতেগোনা দু’একটি মাদ্রাসার অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী থাকলেও বেশিরভাগে সেসব নেই। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ন্যূনতম শর্ত পূরণের মতো অবস্থাও নেই এসব মাদ্রাসার। তবুও টিকিয়ে রাখা হয়েছিল এগুলো। তবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার অনিয়ম খুঁজতে গিয়ে বদলে গেছে দৃশ্যপট। এই মাদ্রাসার এমপিও বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা চাওয়ার পর একদিনে বন্ধ করা হয় ২০২টি মাদ্রাসা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রনক মাহমুদ বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় না ও পাসের হার শূন্য, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিয়ম-নীতি না মেনে সরকারি বেতন-ভাতার অংশ পাওয়ার আশায় অচল প্রতিষ্ঠানও টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চোখে পড়েছে আমাদের। এর পেছনে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী প্রত্যাশিত সংখ্যায় না থাকা ও আশানুরূপ ফল অর্জন না করায় সেখানে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এই বিভাগের সহকারী সচিব মো. আবদুল খালেক স্বাক্ষরিত ওই চিঠির পর এমপিও বন্ধ না করে উল্টো পুরো মাদ্রাসার এমপিও বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এটি পেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
সহকারী সচিব মো. আবদুল খালেক স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাখ্যা চেয়ে বলা হয়, লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার এমপিও বন্ধ করার অনুরোধের পর কেন পাঁচ মাস পর এমপিও বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলো তা আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে হবে। এছাড়া লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার মতো দেশে কতটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে তা জানতে চায় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এসব চিঠি পেয়ে এ বছরের ৯ এপ্রিল ২০৭টি দাখিল মাদ্রাসা সুপারকে চিঠি দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এতে বলা হয়, কেন প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল ও অনলাইন পাসওয়ার্ড ইআইআইএন বন্ধ করা হবে না, ২১ কর্মদিবসের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তা জানাতে হবে।
এরপর গত ২৮ মে ওই ২০৭টি মাদ্রাসার মধ্যে ২০২টি মাদ্রাসার পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল ও অনলাইন পাসওয়ার্ড ইআইআইএন বন্ধ করা হয়। তবে এখনও মন্ত্রণালয়ের চিঠির ব্যাখ্যা দেয়নি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
এদিকে বন্ধ করা মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে কতটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা। এছাড়া সেগুলো কতদিন ধরে এমপিওভুক্ত, কতটি মাদ্রাসা বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাওয়ার অনুপযুক্ত ছিল, অনুযুক্ত থাকার পরও কেন প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে এমপিও দেওয়া হয়েছে, কারা এর সঙ্গে যুক্ত; এসব জানতে চাওয়া হবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কাছে।