নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সবজির বাজারে। নতুন করে দাম না বাড়লেও পরিবহন সংকটের কারণে সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে উচ্চ মূল্যে।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। শুক্রবার ইলিশ বিক্রিও হয়েছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে। এ ছাড়া কোরবানির ঈদ ঘিরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মসলা।
নতুন করে পেঁয়াজের দাম না বাড়লেও এদিন প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১০৮ টাকায়। আদার দামও বাড়তি। গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয় ১২০ টাকা। ৮০-৯০ টাকা কেজি রসুন বিক্রি হয় ৯০-১১০ টাকা।
তবে ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ-মাংসসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও মালিবাগ বাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বাজারগুলোতে শুক্রবার প্রতি কেজি গাজর ৬০ টাকায় বিক্রি হয়, যা গত সপ্তাহে একই দাম ছিল। বরবটি প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা। প্রতি কেজি শসা ৬০-৬৫ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা মানভেদে ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা বিক্রি হয়।
তবে কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. খলিল যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি রাজধানীর বাজারে আসছে না। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বাড়তি। তবে গত সপ্তাহের মতো একই দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।
এদিকে ভরা মৌসুমে রাজধানীর বাজারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ইলিশ। শুক্রবার এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকা। ৭০০-৯০০ গ্রাম প্রতি জোড়া ইলিশের দাম পড়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিছুটা আকারে ছোট ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের মাছ বিক্রেতা মো. ইকবাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন বাজারে যে ইলিশের দাম হওয়ার কথা ছিল ২০০ টাকা সেটা এখন ৬০০-৭০০ টাকা। ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছে। দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। ভরা মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও নদী ও সমুদ্রে সে হারে ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই মোকাম থেকে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এদিকে কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মসলার বাজার তত উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ১৮৫০-১৯০০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৮০ টাকা। দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকায়। জিরা (টার্কি) ৪১০ ও ইন্ডিয়ান জিরা ৩১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ ও ২৮০ টাকা।
শান্তিনগর কাঁচা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা এনায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এ সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অজুহাতে সবজির দাম বেশ চড়া। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দামও বেড়েছে ৩ টাকা। কোরবানির ঈদ এখনও অনেক দিন বাকি। তবে এখন থেকেই মসলার দাম বাড়াতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। তাই নিত্যপণ্যের দাম যাতে সহনীয় থাকে এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়াতে হবে।
অন্যদিকে মাছ ও মাংসের বাজারে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে। প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ২৩০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজি প্রতি বড় আকারের চিংড়ি এক হাজার টাকা, মাঝারি আকারের চিংড়ি ৭০০-৭২০ টাকা ও ছোট আকারের চিংড়ি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া কেজি প্রতি তেলাপিয়া ১৩০-১৪০ টাকা, কই ১৪৫-১৫৫ টাকা, সিলভার কার্প ১০০-১৩০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১১০-১৩০ টাকা, নলা ১২৫-১৩৫ টাকা ও সরপুঁটি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজারও স্থিতিশীল। শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। পাকিস্তানি মুরগি আকারভেদে ১৫০-৩০০ টাকা, লেয়ার ২০০ টাকা ও গরুর মাংস ৪৭০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।