নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম এইচএম তোয়াহার আদালতে মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী।
মামলায় বিএনপির এ তিন নেতাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর মামলাটি তদন্ত করে পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি মাসের ৪ আগস্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর একটি অডিও ক্লিপ সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে শোনা যায়- কুমিল্লায় অবস্থানরত নওমি নামে এক কর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। নওমিকে তিনি বলছেন- ঢাকা এসে লোকজন নিয়ে নেমে পড়তে। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর হুকুমে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছাত্রদলের লোকজন ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া মির্জা ফখরুল ও রুহুল কবির রিজভীর হুকুমে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রদলের কর্মীদের ঢুকিয়ে দিয়ে উত্তরায় এনা পরিবহনের দুই বাসে অগ্নিসংযোগ, ঝিগাতলায় আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও হামলা করে কর্মীদের আহত করেছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সরকারের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়ে এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন।
গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানবিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব নিহত হন। এ ছাড়া ১৩ জন আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। টানা আন্দোলনের সপ্তম দিনে গত শনিবার ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
এ সময় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন দলটির আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি অভিযোগ করেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিস, শেখ হাসিনার অফিস। এখানেও হামলা করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন।’
এদিকে শনিবার সামাজিকমাধ্যমে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ব্যারিস্টার মিনহানুর রহমান নওমি নামে এক তরুণের কথোপকথনের অডিও ফাঁস করা হয়। এ অডিওতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নাশকতায় উসকানি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করেন নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।
এদিকে শনিবার রাতে আমীর খসরুর বাসায় তিন দফা তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ ছাড়া রোববার সকালে ব্যারিস্টার নাওমিকে কুমিল্লার বড়ুরা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।