কেবল এই পৃথিবী নয়, আমাদের সামগ্রিক মহাকাশ কিংবা সৌর-মণ্ডলের প্রতিই আমাদের এই মানুষ প্রজাতির প্রবল আগ্রহ। চাঁদে পা ফেলার পর মঙ্গলে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে তারা। বাদ যায়নি সূর্যও। এবার তাকেও ছুঁয়ে দেখতে চায় মানুষ। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই সূর্যে নভোযান পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। শনিবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর রবিবার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নভোযান উড্ডয়ন করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের এক খবর থেকে নভোযান উড্ডয়নের খবর জানা গেছে।
ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভালে পার্কার সোলার প্রোবটির উৎক্ষেপণ সম্ভব হলে এটিই হবে সূর্যের দিকে যাত্রা করা প্রথম নভোযান। নতুন যানটি কোরোনা বা সৌরমুকুট হিসেবে পরিচিত হিসেবে পরিচিত সূর্যের ভয়ঙ্কর গরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা করবে। কোরোনার কার্যকরণ জানতে পারলে মহাশূন্যের ভয়ানক আবহাওয়ার ঝড় ইত্যাদি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন। এই আবহাওয়া পৃথিবীর শক্তিকেও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারে। নাসার সৌরবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ইয়াং বলেন, পৃথিবীর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো করেই মহাশূন্যের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়ে এর মৌলিক গুরুত্ব রয়েছে। কোরোনা আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত ও অপরিচিত পরিবেশ।
১১ আগস্ট শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪৮ মিনিটে ৪৫ মিনিটে উৎক্ষেপণের জন্য নভোযানটির উইনডো খোলার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসে এ কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বারের মতো সেই নভোযান উড্ডয়নের প্রচেষ্টা চলছে। ৯১ বছরের বর্ষীয়ান সৌর জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীর নাম অনুসারে এই অভিযানের নাম দেওয়া হচ্ছে ইউজেনে পার্কার। উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে সূর্য থেকে ৬১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরের স্তর অতিক্রমের জন্য এই মিশন চালানো হচ্ছে। এটিই হতে যাচ্ছে সূর্যকে ছোঁয়ার প্রথম মিশন। নভোযানটির সফল উড্ডয়ন সম্ভব হলে এর মাধ্যমে আমাদের অদ্ভুত ও রহস্যময় নক্ষত্রকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নভোযানটি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী নিকি ফক্স যুক্ত রয়েছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে। তিনি বলেন, নভোযানটির সূর্যের দিকে থাকা অংশটি ১৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে। নভোযানটি একটি হিট শিল্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে। এর ফলে ভেতরের তাপমাত্রা সাধারণভাবে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা রুমের তাপমাত্রার মতোই থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে চলা যানটি মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রুতগামী যান হতে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, সাত বছরের বেশি সময়ের এই অভিযানে নভোযানটি ২৪ বারের মতো কোরোনা অতিক্রম করবে। ফক্স বলেন, এই অভিযান হবে পুরোপুরি একটি দুঃসাহসী যাত্রা।
দেখুন নাসার নভোযান উৎক্ষেপণের সেই ভিডিও:
সাধারণত ক্যাম্পফায়ারে কেন্দ্রের দিকে তাপমাত্রা বেশি হলেও সূর্যের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। এর ভূপৃষ্ঠের চেয়ে কিছুটা দূরেই বেশি তাপমাত্রা থাকে। ফক্স বলেন, ‘সূর্যের ভূপৃষ্ঠের দিকে যেতে থাকলে আমরা ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে কোরোনায় প্রবেশ করা মাত্র তা ১০ লাখ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে। নাসা এই তারতম্যকে ‘কোরোনাল তাপমাত্রা সমস্যা’ বলে অভিহিত করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে হঠাৎ করে এভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার রহস্যও সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। ফক্স বলেন, বিজ্ঞানীরা যেভাবে সম্ভব কোরোনা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখন কাছ থেকে এটা দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের এই কার্যকর অঞ্চলে প্রবেশ করা প্রয়োজন, যেখানে আসলে এসব রহস্য সংঘটিত হয়।
নতুন নভোযানটি সাড়ে চার ইঞ্চি পুরু কার্বন-যৌগ বর্ম দিয়ে সুরক্ষিত থাকবে। এটা পৃথিবীতে সূর্যের তেজষ্ক্রিয়তার ৫০০ গুণ তেজস্ক্রিয়তা প্রতিহত করতে সক্ষম। নভোযানটিতে থাকা অনেকগুলো যন্ত্র সেখানকার চুম্বকীয় ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র, প্লাজমা তরঙ্গ ও উচ্চ শক্তির কণা পরিমাপ করবে। ফক্স বলেন, নভোযানটি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা জানার জন্য সেখানে একটি সাদা হালকা ক্যামেরা থাকবে। সেখানে সব সময়ই যন্ত্রপাতি থাকবে। কিন্তু আমাদের তথ্য সংগ্রহের প্রধান সময় হলো ১১ দিন।