একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার পর গতকাল বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর পর গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে আগামীকাল শনিবার দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি।
বিএনপির গতকালের স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ইতিবাচক। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। বিএনপি এখন যেহেতু জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে, সে কারণে হুট করে এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেবে না বিএনপি।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়ে দলটি নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। ওই নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়টিও সরকার মেনে নেয়নি। বর্তমানে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তিসহ আরও কিছু বিষয়ে আন্দোলন করছে দলটি।
দলের অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের কাছে দীর্ঘদিন থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সরকার এই ইস্যুতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। এখন খালেদা জিয়াকে ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে মনে হয় না। এই মুহূর্তে বিএনপির সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি জোটগতভাবে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনকে সফল করতে হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিকল্প নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না–যাওয়ার বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না। এই নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই, শুধু সরকারকে বৈধতা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে না গেলে বিএনপির যেসব প্রার্থী নির্বাচনে যেতে চান, তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন। সব মিলিয়ে অনেক বিষয় পর্যালোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামীকাল একটি বৈঠক আছে, সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে আজ শুক্রবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচন করতে চাইলে তিন দিনের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে। আজই দলগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, কোনো অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সদস্য যদি নিবন্ধিত কোনো দলের হয়ে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান, তাহলে সেটি সম্ভব।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুসারে আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতের নেতারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের নেতারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন—সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে ধানের শীষে নির্বাচন করার জন্য বলা হয়েছিল, কিন্তু এ বিষয়ে দলটি ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি। এবার নির্বাচনে জামায়াতের জন্য নবম জাতীয় সংসদের (২০০৮) তুলনায় কম আসন বরাদ্দ থাকবে বলেও তিনি জানান।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে গত অক্টোবরে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় বিএনপি। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ রাজশাহীতে সমাবেশ করে ঐক্যফ্রন্ট। এই সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশে আবারও সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে জাতীয় নির্বাচন করার আহ্বান জানান জোটের নেতারা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চাওয়া ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। সংলাপে দুই-একটি দল ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ দল দাবি করেছিল, ন্যূনতম সমঝোতায় না আসা পর্যন্ত যেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা হয়। এই দাবির বিষয়ে দলগুলোর বক্তব্য ছিল, বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার মতো বিশ্বাসযোগ্য কিছু করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এসব কারণে দলগুলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।