বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনি আসন ফেনী-১ থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর রায়ের পর খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া নিয়ে সংশয় থাকায় এমন গুঞ্জন উঠেছে।
এ অবস্থায় নির্বাচনে জয়লাভের জন্য কম ঝুঁকি থাকা আসনটি থেকে ড. কামাল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের একাধিক সূত্র।
ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ সংসদীয় আসন। এই আসনে ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় ফেনী-১ আসনটি খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে খ্যাত। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও সর্বশেষ ২০০৮ সালসহ সর্বমোট চারবার আসনটি থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তবে সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর রায় ঘোষণার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরশুরাম পৌর সভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব। তা না হলে বেগম জিয়ার সমর্থন নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনসহ যে কেউ ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলে এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে এই আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে জানান তিনি।
ড. কামাল হোসেনের ফেনী-১ আসনে প্রার্থীতা নিয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সফি উল্যাহ জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইতিপূর্বে নির্বাচিত সংসদীয় আসন ফেনী–১ অথবা বগুড়ার আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য ড. কামাল হোসেনকে বিএনপির একাধিক নেতা প্রস্তাবনা দিয়েছে। তবে কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবে, ঐক্যফ্রন্ট এ বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে আসনটিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার মহাজোট প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি সংসদীয় আসনে নিয়মিত জনসংযোগ ও যাওয়া-আসার মাধ্যমে জাসদের সাংগঠনিক ভিত্তি পুনর্গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে তাকে ‘হেভি ওয়েট’ প্রার্থী হিসেবেই মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে আসনটিতে দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম।
আলা উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফেনী-১ আসনে নির্বাচনের জন্য দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। বাকিটা দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবো।
তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে সদস্য থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের একজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত এ আসনটি এখন পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে।
জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার জাগো বাংলা ২৪ ডট কমকে বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে কমিটি গঠনের পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত এলাকায় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছি। মনোনয়নের বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’
১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ৯০ পর্যন্ত এ আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব)। তবে ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি খালেদা জিয়ার কাছে হেরে যান। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলে তার ঘনিষ্ট জনেরা জানিয়েছেন ।