নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএম, সেনা মোতায়েনসহ নানা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করছে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলগুলো। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দল প্রাথমিকভাবে প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করেছে। কিছু দল ক্ষমতায় যেতে বড় জোটের শরিক হতে বা তাদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টাও করছে। প্রচারণায় জনসংযোগ শুরু করেছেন দলগুলোর নেতারা। ইসলামি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিভ্ন্নি জোটে যাওয়ার প্রস্তাব থাকলেও তাতে সাড়া দেয়নি দলটি। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়নি অভিযোগ তুলে দলটি ভোটের তারিখ পেছানোর দাবিও জানিয়েছে। শনিবার তফসিল পেছানো এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে ইসলামী আন্দোলন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ শুরু করেছেন দলটির নেতারা। তবে দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবার নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তার ভাই সৈয়দ ফয়জুল করীম বরিশাল সদর ও ঝালকাঠির দুটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে নুরল করীম বরিশাল ও সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ খুলনা ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম কুমিল্লা থেকে নির্বাচন করবেন।
দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এককভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ইসলামী আন্দোলন প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা আশাবাদী।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের যৌক্তিক দাবিকে উপেক্ষা করে এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্যে কোনোরকম সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি না করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণা দুঃখজনক। ক্ষমতাসীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলের জন্যে গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করবে এই আশা আমরা করছি।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আরেকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল হচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট। শুরুতে চারটি দল মিলে এই জোট গঠন করা হলেও এখন নির্বাচন কমিশনে ইসলামী ঐক্যজোটের নিবন্ধন একক রাজনৈতিক দল হিসেবেই। দলটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল ১৭ বছর। সে সম্পর্ক ত্যাগ করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২০ দলীয় জোট ছাড়ে দলটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আস্থায় যেতে তৎপরতা রয়েছে দলটির। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের কাছে আসন চেয়ে চিঠিও দিয়েছিল দলটি। ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে গিয়েছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের ১২ নেতা। এছাড়া, তফসিল ঘোষণার পর স্বাগতও জানায় দলটি। তবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তারা কোনও বার্তা পেয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে ২৭৮ জন প্রার্থীর তালিকা করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে শেষ পর্যন্ত ১০০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ১১ নভেম্বর থেকে ইসলামি ঐক্যজোটের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নরসিংদী-৩ ও ঢাকা-৫ আসনে, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ চট্টগ্রাম-৭ আসনে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া -৩ আসনে, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১ আসনে প্রার্থী হবেন।
দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, আমরা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচন করবো। কোনও জোট যাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনি পরিবেশ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। তবে এর মধ্যে অন্তর্কোন্দলে দুই ভাগ হয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এ দুই দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হবে জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের পর। তবে উভয় অংশই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশই নির্বাচন নিয়ে মাঠে নেমেছে। জমিয়তের একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, অপর অংশে মুফতি ওয়াক্কাস।
মাওলানা নূর হোসাইন অংশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা যেহেতু একটি জোটে আছি তাই আমাদের নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়টি জোটের সঙ্গে সমঝোতার ওপর নির্ভর করবে। দলের কারা কারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান সেই তালিকা করা হয়েছে। জোটের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গত ১১ আগস্ট নির্বাচনি সমঝোতায় জাতীয় পার্টির জোটে যোগ দিয়েছে। দলটির মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকসহ দলের ১৫ জন নেতা নির্বাচন অংশ নিতে আগ্রহী। দলটির মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক জাগো বাংলা ডটকমকে বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রার্থী এসব বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে, এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোটের বাইরে আছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। কোন্দলে এ দলটিও ভেঙে দুই ভাগ। দলটির একাংশ ৬ নভেম্বর গণ ভবনে সংলাপে অংশ নেয় । একাংশের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জি হুজুর বলেন, আমরা আমাদের মতো করে এককভাবে নির্বাচন করবো। নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত।
ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের সমর্থন চায় জাকের পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদী ৬ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে অংশ নেন। সে সময় মোস্তফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদী বলেছেন, আমরা আগাগোড়া মহাজোটের সাথেই আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।
নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়েছে বেশ কিছু নতুন জোট। ১৫টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ১৫ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে। এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি। ৬ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে অংশ নেয় জোটের নেতারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশে থাকার চেষ্টা জোটের নেতাদের।
ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের কো–চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, আমরা নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেবো। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
এম এ আউয়াল বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও ইসলামের প্রচার প্রচারণায় অবদান রয়েছে। আমরা আগেও তাদের পাশে ছিলাম। আগামীতেও থাকবো।