শুক্রবার, মে ১৬, ২০২৫
Jago Bangla 24
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয়
  • অর্থনীতি
  • রাজনীতি
  • বিশ্ব
  • সারাদেশ
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
No Result
View All Result
Jago Bangla 24

নির্বাচনি ইশতেহারে কী চাই?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

by স্টাফ রিপোর্টার
নভেম্বর ২৪, ২০১৮
A A
নির্বাচনি ইশতেহারে কী চাই?
Share on FacebookShare on Twitter

নির্বাচন আসছে, তাই রাজনৈতিক দলগুলো এখন অনেক খাটাখাটুনি করে তাদের দলের নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করবে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই নির্বাচনি ইশতেহারে আমি দেখতে চাই এরকম দশটি বিষয়ের কথা বলতে, তাহলে আমার তালিকাটি হবে এ রকম:

১। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ: সবার আগে আমি চাইবো, সব রাজনৈতিক দল যেন তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে খুবই স্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলে। এই দেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের কথা বলে রাজাকার কমান্ডারদের একবার ক্ষমতায় আসতে দেখে আমি ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ’ কথাটির ব্যাপারে অনেক স্পর্শকাতর হয়ে গেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ থেকে এই কথাটি খুব স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হতে না শুনলে আমি স্বস্তি অনুভব করি না। একাত্তর সালে আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি যারা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার, তারাই একদিন এই দেশের মন্ত্রী হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে আর কখনও যেন এ রকম কিছু ঘটতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ে তোলা হবে বলা হলে আসলে অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বুঝে যাই, আমরা সব ধর্ম, সব বর্ণ, সমাজের সব স্তরের মানুষকে নিয়ে একটা আধুনিক দেশ গড়ে তোলার কথা বলছি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাই, আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক দেশের কথা বলছি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি। সেজন্য এই তালিকার প্রথম বিষয়টি সবসময়েই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ।

Related posts

ঢাকা-ইসলামাবাদ সমুদ্র যোগাযোগ: ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

ঢাকা-ইসলামাবাদ সমুদ্র যোগাযোগ: ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

নভেম্বর ১৮, ২০২৪
বাংলাদেশে বর্তমান অরাজকতার অবসান কোথায়?

বাংলাদেশে বর্তমান অরাজকতার অবসান কোথায়?

আগস্ট ১২, ২০১৯

২। বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় কোনটি জিজ্ঞেস করা হলে অনেক ঘটনার কথা উঠে আসবে, যার একটি হচ্ছে ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম নির্বাসন দেওয়া। ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়ে গেছে কিন্তু তার স্মৃতিটুকুও যেন এই দেশে না থাকে, তার জন্যে সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে। রেডিও টেলিভিশনে তার নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কথা না জেনেই। অথচ এই মানুষটি ও বাংলাদেশ আসলে সমার্থক। আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধু এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদি তার জন্ম না হতো, আমরা সম্ভবত বাংলাদেশটিকে পেতাম না। বেঁচে থাকতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, কিন্তু এখন তিনি আর কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি, সারা বাংলাদেশের সব মানুষের নেতা।

কাজেই আমি চাই, এই দেশের সব রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্বীকার করবে। অকৃতজ্ঞ মানুষকে আমরা ঘেন্না করি, তার থেকে শত হাত দূরে থাকি। ঠিক একই কারণে অকৃতজ্ঞ রাজনৈতিক দলের জন্যে সেটা অন্যরকম হবে কেন? তাদের কাছে অন্যেরা কে কী আশা করে আমি জানি না, ব্যক্তিগতভাবে আমি অকৃতজ্ঞ রাজনৈতিক দলের কাছে কিছুই আশা করতে পারি না।

৩। অসাম্প্রদায়িক: বাংলাদেশ গত দশ বছরে অনেক অগ্রসর হয়েছে। সংখ্যা দিয়ে বিচার করতে চাইলে বলা যায় জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ, মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৭৫২ ডলার, দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ২২ শতাংশ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তৈরি করা পদ্মা ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে গেছে ৬০ শতাংশ। বিদেশি পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা দেখানোর জন্য খুবই ব্যস্ত, তারা প্রায় সময়েই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের রগরগে চটুল তথ্য দিয়ে হেড লাইন করে থাকে। সে রকম একটি সাপ্তাহিকী দ্য ইকনোমিস্ট পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অবশ্যই দেশের উন্নয়ন দেখে সবাই খুশি। আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, চাইলেই অনেক দ্রুত দেশকে উন্নত করে ফেলতে পারবো।

কিন্তু আমাদের সমস্ত আনন্দ ও উৎসাহ মাঝে মাঝেই ছোট একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা দেখে পুরোপুরি ম্লান হয়ে যায়। যত সময় যাবে, আমাদের হৃদয়ের প্রসারতা তত বাড়ার কথা, আমাদের তত উদার হওয়ার কথা। কিন্তু যখন দেখি, সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কমেনি বরং বেড়েছে, তখন আমরা খুবই অসহায় বোধ করি। আমি সবসময়েই বলে এসেছি, একটা দেশ ভালো চলছে না খারাপ চলছে, সেটি জানার জন্য বড় বড় গবেষণা করতে হয় না। সেমিনার কিংবা গোল টেবিল বৈঠক করতে হয় না। দেশের একজন সংখ্যা লঘু কিংবা  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয়। তারা যদি বলে, দেশটি ভালো চলছে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি আসলেই ভালো চলছে। যদি তারা প্রশ্নের উত্তর ‘না’ দিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটি ভালো চলছে না। এই দেশে এখনও মানুষে মানুষে বিভাজন রয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগে আমি দলিত শিশুদের একটি সমাবেশে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি ফুটফুটে শিশুদের কাছে শুনেছিলাম, তারা সেই এলাকায় অস্পৃশ্য। পানি খাওয়ার জন্য একটা গ্লাসকে পর্যন্ত তারা স্পর্শ করতে পারে না।

কাজেই আমি চাইবো, নির্বাচনি ইশতেহারে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে, দেশের সব মানুষের ভেতর থেকে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা দূর করে সবাইকে নিয়ে আধুনিক একটা বাংলাদেশ তৈরি করা হবে।

৪। নারী-পুরুষ সমতা: আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি কী,আমি সব সময়েই তার উত্তরে বলে থাকি যে, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, এখানে সবক্ষেত্রে ছেলেরা এবং মেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোয় বরং মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের লেখাপড়ার মান ভালো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যখন বইপড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, সেখানে মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আন্তর্জাতিক মেয়েদের খেলাতেও মেয়েরা অনেক ভালো করছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে দেখা যায়, ছেলেদের সংখ্যা থেকে মেয়েদের সংখ্যা কম। কারণ তখন বাবা-মায়েদের ধারণা হয় ভালো একটা পাত্র দেখে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলা দরকার। মেয়েরা যে শুধু লেখাপড়ার সব জায়গায় আছে তা নয়, গার্মেন্টস শ্রমিক প্রায় সবাই মেয়ে এবং তারা আমাদের অর্থনীতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তবে ক্যারিয়ার বলে একটা নিষ্ঠুর শব্দ আছে। যেকোনও পর্যায়েই এই ক্যারিয়ারের প্রতিযোগিতায় পুরুষের কাছে মেয়েরা হেরে যায়। কারণ, যখন ক্যারিয়ার গড়ার সময়, সেটি সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়, সন্তানকে বড় করার সময়। পুরুষ মানুষ অনেক কিছু করতে পারলেও সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সন্তানের মা হতে পারে না।

কাজেই রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে নারীদের এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। যেখানে মেয়েরা কাজ করে, সেখানে চমৎকার ডে কেয়ার গড়ে তুলতে পারে। সেটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিই হোক আর বিশ্ববিদ্যালয়ই হোক। যদি মায়েরা জানে তার শিশু সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার একটা জায়গা আছে, তাহলে তাদের জীবনটাই অন্যরকম হয়ে যেতে পারে। নির্বাচনকালীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে একটা শব্দ খুবই জনপ্রিয় হয়েছে, তাহলে পুরুষ ও নারীর ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ব্যাপারে কেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না? মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার বেলায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। তাহলে মায়েদের কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার বেলায় আমাদের দেশ কেন এগিয়ে থাকবে না?

কাজেই নির্বাচনি ইশতেহারে আমি নারী পুরুষের মাঝে সমতা আনার জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝ থেকে এরকম একটি অঙ্গীকার দেখতে চাই।

৫। জ্ঞানভিত্তিক দেশ:  প্রথম যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছিল, তখন অনেকেই ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়েছিল এবং বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি। কিন্তু এখন মোটামুটি সবাই বিষয়টা গ্রহণ করেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে উদ্যোগ নেওয়ার কারণে অনেক কিছু ঘটেছে, যেটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘটা সম্ভব ছিল না। যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হয়, তখন দেশের মানুষের কথা আলাদাভাবে বলা হয় না,কিন্তু যদি এর পরের ধাপ হিসেবে আমরা জ্ঞানভিত্তিক দেশের কথা বলি, তখন কিন্তু আমরা দেশের মানুষের কথা বলি। আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সব মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ কোটি। যদি তাদের সবাইকে ঠিকভাবে লেখাপড়া করানো যায়, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে, সে রকম দেশ আর কয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে? আমরা সবাই দেখেছি, এই দেশের একেবারে সাধারণ মানুষটিও কিন্তু লেখাপড়ার গুরুত্বটি ধরতে পেরেছে। লেখাপড়ার মান নিয়ে আমরা এখনও সন্তুষ্ট নই কিন্তু যদি লেখাপড়ার মানটুকু বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে জোর দিয়ে বলা যাবে, আমাদের দেশটিকে জ্ঞানভিত্তিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে সব উপাদান আছে।

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এখনও এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের শরীরের ঘাম। তাদের পাশে যদি মেধা নিয়ে নতুন প্রজন্ম দাঁড়াতে শুরু করে, তাহলেই আমরা জ্ঞানভিত্তিক দেশের স্বপ্নে পা দিতে শুরু করবো। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আশা করতেই পারি, তারা আমাদের দেশকে জ্ঞানভিত্তিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাবে।

৬। শিক্ষায় জিডিপির চার শতাংশ: বাংলাদেশ ডাকার সম্মেলনে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা দেশের জিডিপির  ৬ শতাংশ খরচ করবে শিক্ষায়। এখন বাংলাদেশ খরচ করছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকেও কম। আমি সব সময়েই বলে থাকি, লেখাপড়ার পেছনে এত কম টাকা খরচ করে পৃথিবীর আর কোনও দেশ এত ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করানোর কথা চিন্তাও করতে পারবে না! আমরা ইচ্ছা করলে তো দাবি করতেই পারি যে, যতটুকু অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ততটুকু খরচ করতে হবে কিন্তু তাহলে হয়তো আমাদের দাবিটা কেউ বিশ্বাস করবে না। এই মুহূর্তেও যেটুকু খরচ করা হচ্ছে, তার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি কেমন করে চাই?

তাই আমার মনে হয়, আমরা আপাতত নির্বাচনি ইশতেহারের জন্য জিডিপির চার শতাংশ চাইতে পারি! যারা বাজেট করেন, তাদের বিশ্বাস করতে হবে লেখাপড়ার পেছনে যদি একটাকাও বাড়তি খরচ করা হয়, তাহলে সেটারও একটা ফল পাওয়া যায়। তার কারণ লেখাপড়ার পেছনে যে টাকা খরচ করা সেটি মোটেও খরচ নয়, সেটি হচ্ছে বিনিয়োগ।

৭। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: কেন সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া উচিত, সেটি নিশ্চয়ই নতুন করে কাউকে বোঝাতে হবে না। ভর্তি পরীক্ষার নামে ছেলে মেয়েদের এমন একটি নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে নেওয়া হয়, যেটি রীতিমতো অবিশ্বাস্য। রাষ্ট্রপতি সেটি লক্ষ্য করেছেন এবং একাধিকবার সব ভাইস চ্যান্সেলরকে ডেকে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। গত বছর সেটি নেওয়া সম্ভব হয়নি,আমি ভেবেছিলাম এই বছর নিশ্চয়ই সেটি হবে। কিন্তু আমি সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছি যে, এই বছরেও কেউ এটি নিয়ে কথা বলছে না! সত্যি কথা বলতে কী, এই বছর অবস্থা আগের থেকে খারাপ। আগে যে পরীক্ষাটি একবার নেওয়া হয়েছে, প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণে এবার সেই পরীক্ষা দুই বার নিতে হয়েছে। কেমন করে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করবো, জানি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অঙ্গীকার এই দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং তাদের বাব-মা একবাক্যে লুফে নেবে।

কাজেই নির্বাচনি ইশতেহারে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার অঙ্গীকার করে তরুণ প্রজন্মকে খুব সহজে উৎসাহী করা সম্ভব বলে আমি মনে করি!

৮। সাইকেল লেন:  বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরের বাইরে থাকে, তারা যদি ঢাকায় একে একবার ট্রাফিক জ্যামের যন্ত্রণাটা অনুভব করে তাহলে সাধারণত তার ঢাকা আসার সাধ জন্মের মতো মিটে যায়। ঢাকা শহরে নানা মিটিংয়ের জন্যে আমাকে প্রায়ই আসতে হয়, আমি একটা বিচিত্র বিষয় আবিষ্কার করেছি। ঢাকা শহরে কোথাও আমি সময়মতো যেতে পারি না।

বেশি সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়ার পরও ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারি না কিংবা বেশি সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়ার কারণে অনেক আগে পৌঁছে গিয়ে সময় কাটানোর জন্যে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাই। সোজা কথায় বলা যায়, কতটুকু দূরত্ব কত সময়ে পৌঁছানো যাবে, সে দুটির মাঝে কোনও সম্পর্ক নেই। এ কারণে ঢাকার মানুষজনের যে কী পরিমাণ সময় নষ্ট হয়, তার কোনও হিসাব নেই। সেই সময়টাকে যদি টাকা দিয়ে বিবেচনা করা যায়, আমার ধারণা তাহলে আমরা প্রতি মাসে একটা করে পদ্মা ব্রিজ তৈরি করে ফেলতে পারবো।

আমার ধারণা, এর একতা খুব সহজ সমাধান আছে, সেটা হচ্ছে সাইকেলে যাতায়াত করা। আমাদের নতুন একটা আধুনিক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যারা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সাইকেলে যেতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। শুধু তাই না, স্কুলের অনেক ছেলে-মেয়েও সাইকেলে করে স্কুলে যাবে। এখন যেতে পারে না শুধু একটি কারণে, সেটা হচ্ছে ব্যাপারটা মোটেও নিরাপদ নয়। যে রাস্তায় দৈত্যের মতো  বড় বড়  বাস-ট্রাক একজনের সঙ্গে আরেকজন প্রতিযোগিতা করে ছুটে যাচ্ছে, সেই রাস্তায় কে সাইকেলে যেতে সাহস পাবে? কিন্তু যদি রাস্তার এক পাশে ছোট একটি লেন তৈরি করে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়, তাহলে সবাই সেই পথে যেতে পারবে। আমার এই কথাগুলো মোটেও আজগুবি কথাবার্তা নয়। পৃথিবীর অনেক বড় শহরে সাইকেল যাত্রীদের জন্যে আলাদা পথের ব্যবস্থা করে রাখা আছে। আজকাল শুধু যে সাইকেলের পথ তৈরি হয়েছে তা নয়, সাইকেল ভাড়া করার জন্যে একটু পরে পরে সারি সারি সাইকেল রাখা আছে, কাউকে আর সাইকেল কিনতেও হয় না।

তাই আমি মনে করি নির্বাচনি ইশতেহারে যদি সব বড় বড় শহরে সাইকেলের আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়, নতুন প্রজন্ম অনেক আগ্রহ নিয়ে সেটি গ্রহণ করবে।

৯। সোশাল নেটওয়ার্কের অভিশাপ থেকে মুক্তি: আমি এখন যেটা বলতে চাইছি, সেটি সবাই মানতে রাজি হবেন কিনা আমি জানি না, কিন্তু আমি যেহেতু আমার নিজের পছন্দের কথা বলছি অন্যেরা রাজি না হলেও খুব ক্ষতি নেই।

আমি জানি না, সবাই এটি লক্ষ করেছে কিনা, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটা মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, যে পরিবর্তনটি ভালো নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে কমে এসেছে। এটি শুধু যে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ঘটেছে তা নয়, সারা পৃথিবীর সব দেশের ছাত্রছাত্রীদের বেলায়ও ঘটেছে। এর কারণটিও এখন আর কারও অজানা নয়, সেটা হচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নামক বিষয়টির প্রতি আসক্তি। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, সারা পৃথিবীটি এখন দুটি জগতে ভাগ হয়ে গেছে, একটি হচ্ছে রক্তমাংসের বাস্তব জগৎ, আরেকটি ইন্টারনেটের পরাবাস্তব জগৎ। ইন্টারনেটের জগতে একেবারে তুলকালাম ঘটে যাচ্ছে কিন্তু বাস্তব জগতের কেউ সেটি সম্পর্কে কিছু জানে না, সেটি এখন এমন কিছু বিচিত্র ব্যাপার নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত না থেকে আক্ষরিক অর্থে এক মুহূর্ত থাকতে পারে না, সেরকম মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। সাধারণ মানুষজন হয়তো খুব বেশি জানে না কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি জগতের বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে, যেগুলো হয়তো আমরা নিজেরাই জানি না। তথ্য এখন সোনার চেয়েও দামি এবং আমরা না জেনে আমাদের সমস্ত তথ্যভাণ্ডার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে যেটি ফ্যি সার্ভিস মনে হচ্ছে, সেটি যে ফ্রি নয় এবং একবার আমাদের ভালো করে হাতে পেয়ে নিলে হঠাৎ করে গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, আমাজন বা আপেলের মতো বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলো যে আমাদের সর্বস্ব সুদে-আসলে তুলে নেবে না, আমরা সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারি না।

সারা পৃথিবীতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা কোথায় আছি এবং কোথায় যাবো, সেটি কেউ ভালো করে জানে না। কিন্তু বোঝার আগে আমরা হয়তো আবিষ্কার করবো, আমরা অন্যের হাতের পুতুল হয়ে বসে আছি।

তাই আমি চাই নির্বাচনি ইশতেহারে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকুক। পরিবর্তনশীল এই নাজুক পৃথিবীতে পৃথিবীর বড় বড় তথ্য প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের পুরোপুরি কব্জা করে ফেলার আগে আমাদের যেন নিজেদের রক্ষা করার একটা পথ খোলা থাকে। সেই সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আসক্ত ছেলে-মেয়েদের রক্তমাংসের জগতে ফিরিয়ে আনার একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে।

১০। বাক-স্বাধীনতা: আমি জানি বাক-স্বাধীনতা কথাটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ অনেকবার দেখেছি ঠিক কোথায় বাকস্বাধীনতা খিস্তি খেউড় গালাগাল হয়ে যাচ্ছে, সেটা অনেকেই জানে না। সামনা-সামনি অনেকেই একে অন্যকে গালমন্দ করে না কিন্তু ইন্টারনেটের পরাবাস্তব জগতে খুব সহজেই একজন অন্যজনকে তুলোধূনা করে ফেলে। এই সবের পরেও আমি মনে করি, একজনের বাক-স্বাধীনতা থাকুক, বাড়াবাড়ি করে ফেললে সেটাকে প্রতিবাদ করার ব্যবস্থা থাকুক কিন্তু মন খুলে কথা বলা নিয়ে সবার ভেতরে যতি একটা আতঙ্ক কাজ করে তাহলে সেটি ভালো কথা নয়।

আমার মনে হয় আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ৫৭ ধারাটি সবার মাঝে এক ধরনের ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটে খিস্তি খেউড় হয়তো কমেছে কিন্তু অনেক জায়গায়ই মানুষ  তাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানাতে ভয় পেতে শুরু করেছে। এটি আমরা কখনো চাই না। ৫৭ ধারার বাক্যগুলো খুবই ঢিলেঢালা ইচ্ছে করলেই যেকোনও মানুষের যেকোনও কথাকে ব্যবসার করে তাকে বিপদে ফেলে দেওয়া যাবে।

তাই আমি মনে করি নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা বাক-স্বাধীনতা নিয়ে আরেকটু গুছিয়ে তৈরি করা একটি প্রস্তাব আশা করতে পারি।

এই হচ্ছে নির্বাচনি ইশতেহারে আমি কী দেখতে চাই, সেরকম দশটি বিষয়ের তালিকা। দেখাই যাচ্ছে এটি কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ নয় এবং আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাই ঘুরেফিরে সেগুলোই এসেছে। কিন্তু ক্ষতি কী? এটাই তো বাক-স্বাধীনতা আমার যেটা বলতে ইচ্ছে করছে সেটা বলছি! সবাইকে সেটা শুনতে হবে কিংবা বিশ্বাস করতে হবে কে বলেছে?

লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়    

Previous Post

জাতীয় ঐক্যের পেছনে একটি ভয়ানক ড্রাগন

Next Post

‘তারা আমাদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায়’

Next Post
‘তারা আমাদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায়’

‘তারা আমাদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায়’

সর্বশেষ খবর

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার

ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
খাল দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫

খাল দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫

ডিসেম্বর ৯, ২০২৪

‘চাঁদাবাজি’ নিয়ে সমালোচনা, বিএনপির রোষানলে কাদের সিদ্দিকী

ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
হত্যাচেষ্টা মামলায় খালেদা জিয়াসহ ২৬ জনকে অব্যাহতি

হত্যাচেষ্টা মামলায় খালেদা জিয়াসহ ২৬ জনকে অব্যাহতি

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী, জামিন শুনানি ২ জানুয়ারি

চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী, জামিন শুনানি ২ জানুয়ারি

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিজিটাল কমিউনিকেশন চ্যানেল

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিজিটাল কমিউনিকেশন চ্যানেল

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ ফাঁদে পড়ে যা হারালেন তরুণী

‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ ফাঁদে পড়ে যা হারালেন তরুণী

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
রোববার ৩ ঘণ্টা বিঘ্নিত হবে ইন্টারনেট সেবা

রোববার ৩ ঘণ্টা বিঘ্নিত হবে ইন্টারনেট সেবা

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে টেলিটক অনলাইন সিম সেবা

পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে টেলিটক অনলাইন সিম সেবা

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

জাতীয়

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার

দেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার

ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর

ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে

দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ডিসেম্বর ৪, ২০২৪

রাজনীতি

তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা কোথায়?
রাজনীতি

তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা কোথায়?

by স্টাফ রিপোর্টার
ডিসেম্বর ২, ২০২৪
0

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায় হাইকোর্টের রায়ে গত...

Read more
সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল: জামায়াত আমির

সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল: জামায়াত আমির

ডিসেম্বর ২, ২০২৪
সামনের নির্বাচন সহজ হবে না: তারেক রহমান

সামনের নির্বাচন সহজ হবে না: তারেক রহমান

ডিসেম্বর ২, ২০২৪
স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে: তারেক রহমান

স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে: তারেক রহমান

নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান

দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান

নভেম্বর ২৬, ২০২৪
Jago Bangla 24

Jago Bangla 24 is a leading Bangladeshi Online News Portal, covering various topics and analysis from a complete neutral perspective.

নেপথ্যে যারা

সম্পাদক: শেখ শহীদ আলী সেরনিয়াবাত
সহ-সম্পাদক: বাতেন আহমেদ
প্রকাশক: আহমেদ রুবেল

যোগাযোগ

সম্পাদনা বিভাগঃ [email protected]
সংবাদ বিভাগঃ [email protected]
বিপণন বিভাগঃ [email protected]

Follow us on social media:

©2008-2023 Jago Bangla 24. - All rights reserved by Jago Bangla 24.

No Result
View All Result
  • Home
  • Politics
  • News
  • Business
  • Culture
  • National
  • Sports
  • Lifestyle
  • Travel
  • Opinion

©2008-2023 Jago Bangla 24. - All rights reserved by Jago Bangla 24.