ভারতের পশ্চিম বাংলায়ও এনআরসি (নাগরিকপঞ্জি) হতে পারে—এই আতঙ্কে বহু মানুষ বাংলাদেশে ফিরছেন। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে আসায় তাদের গ্রেফতার করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু আটক হয়েছেন। এই অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ঝিনাইদহ ও রাজশাহী সীমান্তে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন গ্রামবাসীরা। অনেক জায়গায় অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কমিটিও হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এদের অনুপ্রবেশকারী বললেও পুলিশ বলছে, এরা বাংলাদেশের নাগরিক। কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন, এখন এনআরসি আতঙ্কে ফিরে আসছেন।
ওসি বলেন, সম্প্রতি যারা ফিরে এসেছেন তারা বাগেরহাট, খুলনা এবং পিরোজপুরের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে কাজের জন্য ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ওদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এলাকার কিছু লোক ব্যাঙ্গালুরুতে থাকেন বহুদিন ধরে। আগে তারা দিল্লি থাকতেন। তারা বাংলাদেশে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। তাদের মাধ্যমেই এরা ছয় মাস থেকে দুই বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। তাদের সবার বাংলাদেশের ভোটার আইডি কার্ড আছে? তারা বাংলাদেশের নাগরিক। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
বেনাপোলের দৌলতপুর ক্যাম্প কমান্ডার মোজাম্মেল হোসেন কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় আমরা বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছি। তাদের কাছে বৈধ কোনো পাসপোর্ট-ভিসা না থাকায় তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই আটক করেছি।
বেনাপোলে আটক জরিনা বেগম (৩৫) বলেন,‘পাঁচ মাস আগে ভারতে গিয়ে বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। সে দেশের পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে-‘তোমরা এ দেশের নাগরিক না। ভালোয় ভালোয় বাংলাদেশে চলে যাও।’ একসঙ্গে আটক আলমগীর খান (৪৫) বলেন, ‘আমরা একই পরিবারের সাত জন কাজের সন্ধানে সাত মাস আগে ভারতে যাই। আমার স্ত্রী ও বোন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করত। আমি টুকটাক বিভিন্ন কাজ করতাম। ভারতে আমাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বলে। তাই আমরা সীমান্ত পার হয়ে এসেছি। এরপর বিজিবি আমাদের আটক করে।’
বিজিবির অনুরোধে মহেশপুরে স্থানীয় প্রশাসন সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয় লোকজন নিয়ে তৈরি ঐসব কমিটি সীমান্ত এলাকায় পাহারা দিচ্ছে। মহেশপুরের সীমান্তবর্তী একটি ইউনিয়নের একজন কাউন্সিলর সায়রা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নজরদারি বাড়ানোর ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। গত কিছুদিন দশ-বিশ জন করে ছোটো ছোটো দলে ভারত থেকে আমাদের দেশে আসছিল। কিন্তু এখন একটা বিরতি দেখছি। বিজিবির কর্মকর্তারাও বলছেন, সীমান্তে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে সতর্ক থাকার কারণে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমেছে।
অনুপ্রবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অনুপ্রবেশ নিয়ে এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। বাংলাদেশি না হলে কেউ সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারবে না।