করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে অচল হয়ে পড়া বিশ্বে এবার প্রবৃদ্ধি না হয়ে বরং সংকুচিত হবার পূর্বাভাস দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
মঙ্গলবার ভার্চুয়ালভাবে শুরু হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর বসন্তকালীন সভা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতি-নির্ধারকরা অনলাইনে এই সভায় অংশ নিচ্ছে।
আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, যদি নীতি-নির্ধারকরা করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে এই মন্দার প্রভাব আগামী বছরও দীর্ঘায়িত হবে।
যদি এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এখন স্পষ্ট যে ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার সামনে দাঁড়িয়ে পৃথিবী। এটা এক দশক আগের অর্থনৈতিক সংকটকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই লকডাউন বিশ্বের প্রবৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলছেন, এই সংকটে বিশ্ব আগামী দুই বছরে ৯ ট্রিলিয়ন ডলার (৯ লাখ কোটি ডলার) প্রবৃদ্ধি হারাবে। এই অঙ্ক জার্মানি ও জাপানের মতো দুই শিল্পোন্নত দেশের মোট জিডিপির পরিমাণের চেয়েও বেশি।
গত জানুয়ারি মাসেও আইএমএফ এ বছর ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলোতে যে অবরুদ্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছে তার ফলে আরেকটি মন্দার দিকে চলে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি।
গোপীনাথ বলেন, শতাব্দীকাল আগের সেই মহামন্দার পর এই প্রথম বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো একসঙ্গে মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। এক দশক আগের মন্দার পর ২০০৯ সালে বিশ্বে অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল, যা ছিল, মহামন্দার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি। এবার তা হতে যাচ্ছে ৩ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এর পরেও মার্কিন প্রবৃদ্ধি মাইনাস ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। ১৯৪৬ সালের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখছে মার্কিন অর্থনীতি।
পূর্বাভাস অনুযায়ী বিশ্বের দ্বিতীয় বড়ো অর্থনীতির দেশ চীনে এ বছর সংকোচন না হলেও প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। যা ১৯৭৬ সালের পর চীনে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রবৃদ্ধি হবে মাইনাস ৭ শতাংশ, জাপানে মাইনাস ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে মাইনাস সাড়ে ৬ শতাংশ।
মহামারির প্রভাবে অর্থনীতির অনেক হিসাব বদলে যাচ্ছে। পরের বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করলেও অনিশ্চয়তার কথা বলছে আইএমএফ। কারণ অর্থনীতির এই পরিবর্তন সাধারণ মানুষের ভোগ ব্যয় এবং ভোক্তা আচরণে অনেক প্রভাব ফেলবে।
দুর্বল চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থার ফলে ভোক্তার আস্থা কমে আসবে। এটি পুনরুদ্ধার কতটা হবে সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের করোনা ভাইরাসের টেস্ট করতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
তাছাড়া স্বাস্থ্যখাতে সংকট মোকাবিলায় অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত সুরক্ষা এবং ভেন্টিলেশন সংগ্রহ এবং মেডিক্যাল পণ্য বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।