রমজান মাসে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করা হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। আমদানিকারক ও আড়তদারদের একটি গোষ্ঠী করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে এই সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা বাজারে সংকট দেখিয়ে বেশি মুনাফার পাশাপাশি সরকারকেও বিব্রত করতে চায়। রোজার মধ্যে বাজার স্বাভাবিক রাখতে ৬ দফা সুপারিশসহ সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগের এবং বর্তমানের বাজারচিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজান মাসে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদের কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। প্রতি বছরই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও অতিরিক্ত চাহিদার দোহাই দিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা থাকে। অনেক সময় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেও বিরোধী মতের আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে।
করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা ও চিকন চাল ৫ টাকা করে বেড়েছে। আলু ৫ টাকা, পেঁয়াজ ৭ টাকা এবং কেজিপ্রতি আদার দাম বেড়েছে ১৪০ টাকা। এ ছাড়া বেগুন কেজিপ্রতি ২০ টাকা, দেশি মুরগি ১০০ টাকা, গরুর মাংস ৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১০০ টাকা করে কেজিতে বেড়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের মাছের দামও বেড়েছে; তবে ডিম, তরল দুধ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বড় বড় পাইকারি বাজার এলাকায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, আদা, চিনি, ছোলা, খেজুর, মাছ ও কাঁচাবাজারের আড়ত অবস্থিত উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এসব আড়তদারদের মজুদ সংক্রান্ত কার্যক্রম নজরদারির মধ্যে রাখা দরকার। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে না পারলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
যে কারণে মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে : নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বেশ কয়েকটি কারণও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, পরিবহন সমস্যার কারণে এবার পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া ত্রাণের জন্য ক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, আতঙ্কের জন্য পণ্য মজুদের প্রবণতা, পরিবহন শ্রমিক স্বল্পতা, সরবরাহ কম থাকা, এলসি বন্ধ এবং আমদানি বন্ধের কারণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
রোজায় বাজার স্বাভাবিক রাখতে যেসব সুপারিশ : গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখযোগ্য আমদানিকারকদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। কোন আমাদানিকারক কি পরিমাণ দ্রব্য আমদানি করছে বা করবে তা মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে আমদানিকারকদের প্রণোদনা ও ট্যাক্স কমানোরও সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অবৈধ মজুদের মাধ্যমে কেউ যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে। খুচরা ও পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এর বাইরে টিসিবির মজুদ বাড়ানো এবং খোলাবাজারে বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি বিক্রয় কেন্দ্র খোলার কথা বলা হয়েছে।