আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা—সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও রাজপথের আন্দোলন জোরদারের মাধ্যমে দাবি আদায় করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না। কারণ বর্তমান কাঠামোতে তারা ভোটে যেতে চান না। তাদের টার্গেট সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি দিয়েছে বিএনপি। অতঃপর ১৯ ডিসেম্বর ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। মূলত তাদের দাবি একটি—তা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ। দলটি ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষে ডান, বাম, ইসলামীসহ সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সঙ্গী করেছে।
অবশ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করার বিএনপি দলীয় দাবি বিগত দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই উড়িয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সরকার। ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হোঁচট খাওয়ার পর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলন সঙ্গীদের নিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল করেছে বিএনপি। পরবর্তী কর্মসূচি হিসাবে আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকার নয়াপল্টনে ৪ ঘণ্টা গণ-অবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটও একই দিনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিভাগীয় শহরগুলোতেও গণ-অবস্থান পালন করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, এভাবে মানববন্ধন, লংমার্চ, গণ-অনশন ও আবারও সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। অবস্থা বুঝে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্যকিছু ভাবছি না আমরা। ১০ দফা দাবি আদায়ই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের পুরো মনোযোগ এখন আন্দোলনের দিকে। সাময়িকভাবে আন্দোলনের গতি কিছুটা ধীরে চললেও সামনের দিনে তা বাড়বে। সরকার পতনের জন্য যে ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজন, তা আসবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার পরিবর্তনে প্রায় সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে। সকলেই চায় একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার। যার মাধ্যমে মানুষ তার ভোটাধিকার ফিরে পাবে এবং যার ভোট সে দিতে পারবে।
আন্দোলনের কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব নেতাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় প্রস্তুতি সভা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।