বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে, ইসরায়েলজুড়ে গাজার হারিয়ে গেছে বন্ধের জন্য ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং অপহৃত সব জিম্মির দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করা। গত সোমবার সকাল থেকেই শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে সাধারণ নাগরিক, জিম্মির পরিবার, নিহতদের স্বজন, শিক্ষাবিদ, বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা ব্যাপক পরিসরে অংশগ্রহণ করছেন।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘অক্টোবর কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে। এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য হলো— জিম্মিদের জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং গাজা যুদ্ধে অবসান ঘটানো।
সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে এই প্রতিবাদ দেশজুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এই সময়টি বিশেষ গুরুত্ব রাখে, কারণ এটিই ছিল গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দিন। শুরু থেকেই পুরো দেশজুড়ে প্রায় ৩০০টি স্থানে প্রতিবাদ, মহাসড়ক, রাস্তার মোড়, শহরের প্রবেশ পথে কর্মসূচি, মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের হোস্টেজ স্কোয়ারকে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দিনে ব্যাপী এই স্কোয়ারগুলোতে জিম্মির পরিবারের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদরা বক্তব্য দিচ্ছেন। এর আগে, সকাল থেকেই আরলোসরফ ট্রেন স্টেশন থেকে একটি বিশাল মিছিল সেই সভাস্থলে এসে মিলিত হয়।
অ্যাজ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন সেখানে জিম্মির পরিবারের সদস্যদের সাথে সাধারণ মানুষ সরাসরি সাক্ষাৎ করে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ শোনার ব্যবস্থা করেছে। সকাল ৭টার দিকে জিম্মি স্বজনরা সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এছাড়া, শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় বন্ধ রেখেছে বা কর্মীদের কাজে যেতে দিচ্ছে না। যদিও ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় শ্রমিক ফেডারেশন হিস্টাড্রুট আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট নয় বললেও, তাদের সদস্যরা ব্যক্তি উদ্যোগে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০টি পৌরসভা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। গাজা সীমান্তের কিছু কিবুত্জ ও স্থানীয় প্রশাসনিক পরিষদ সরাসরি অংশ নিচ্ছে।
অর্থাৎ, এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য একটাই—জিম্মি ও সেনাদের জীবন রক্ষা করা। আন্দোলনের নেতৃত্ব বারবার বলে আসছেন, এটা কোনও রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি মানবিক গণআন্দোলন। তারা স্পষ্ট করেছেন, আজকের এই দিন শুধু যুদ্ধ বন্ধের এবং জিম্মি মুক্তির দাবি জানানোর জন্য, অন্য কিছু নয়।
এদিকে, ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা জারি করেছে বড় ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রায় হাজার হাজার পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে যাতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ব্যাহত না হয়। তবে তারা সতর্ক করে দিয়েছে, কেউ যেন জনজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি বা অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধের মতো কার্যকলাপে অংশগ্রহণ না করেন।
পুলিশ আরও বলেন, মতপ্রকাশের বন্দোবস্ত মর্যাদা রয়েছে, তবে তা যদি সহিংস বা বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবশেষে, আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো—৭ অক্টোবরের হামলার বিস্তারিত ও স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় কমিশন গঠন। আয়োজকেরা অভিযোগ করেন, সরকারের ব্যর্থতা ও অপরাধের জন্য এই তদন্ত অপরিহার্য। তারা জানান, এই আন্দোলন বিভ্রান্তি বা রাজনীতিPow আবেগের জন্য নয়, বরং মানবিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য।
অন্তত এই আন্দোলন ইসরায়েল সরকারকে চাপের মুখে ফেলেছে। কারণ, গাজার ওপর বহু মাস ধরে চলমান যুদ্ধে কতিপয় জিম্মির অবস্থান এখনও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে, সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে, বিশেষ করে যাদের প্রিয়জন এখনও মুক্তির অপেক্ষায়।
বিশেষ করে তেল আবিব, হাইফা, জেরুজালেম, বেয়ারশেভা, নেস জিয়োনা, আশদোদ প্রভৃতি শহরে এই আন্দোলনের তীব্রতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।