রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েক দফায় আলোচনা চালিয়ে যায় এর পর তারা একটি খসড়া প্রস্তুত করে যার ভিত্তিতে তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেয়। এই খসড়া ও মতামত নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে জুলাই সনদ ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও সংকট দেখা দিয়েছে। বিবিসি বাংলার খবরে জানানো হয়, বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত সংসদই এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ কিছু দল এই সনদ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য গণভোট, গণপরিষদ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে চান। এই অস্থির পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধানত দলগুলোর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, “এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে। আমরা কোনও চাপ দিতে পারব না।” কমিশন দলের সাথে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও বিএনপি প্রথমে অনড় থাকলেও বর্তমানে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের করা সম্ভব। আমরা এতে অংশগ্রহণ করবো।” অন্যদিকে, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী বলছে, আগামিতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তারা বলছেন, অচিরেই এই সনদ গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে। মাসের পর মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া শেষে, নানা বিষয় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে তারা একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে যা দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, জনগণের সর্বজনীন মতামতের ভিত্তিতে এ সনদ গৃহীত হয়েছে। তাই এটি প্রচলিত আইন বা আদালতের রায়ের ওপর অগ্রাধিকার পাবে, এবং এর জন্য একটি বিশেষ সাংবিধানিক ব্যবস্থা গঠন করা হবে। অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে তারা আদালত থেকে কোনও প্রশ্ন বা আপত্তি না তুলতে চায়। উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে, যেখানে সাবেক বিচারপতি, আইন শিক্ষক ও সিনিয়র আইনজীবীরা মতামত দিচ্ছেন। ঐকমত্য কমিশন জানায়, এই বিশেষজ্ঞদের মতামত পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হবে, যা আগামী ২৫ অগাস্টের পরে অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে প্রশ্ন ওঠবে, আগামী সংসদের আগে কীভাবে আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে, এবং জুলাই সনদের আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে চালু হবে, তা স্পষ্টভাবে আলোচনা হবে। দীর্ঘদিনের আলোচনা শেষে, গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার একটি অভ্যুত্থান ঘোষণাপত্র দেয়। যেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি ছিল, তবে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামি কিছু নেতার হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, জুলাই সনদে এক শতাংশও ছাড় দেওয়া হবে না। প্রথমে, ঐকমত্য খসড়ায় বলা হয়েছিল যে, গৃহীত হলে প্রস্তাবনা ও সুপারিশগুলো দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সরকার। তবে, বিএনপি জানিয়েছে, পরবর্তী সংসদেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ভিন্ন মত পোষণ করে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন এবং গণঅধিকার পরিষদ বলছে, তারা চায় এই সনদ গার্হস্ত্য, গণভোট বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনও বাধা না আসে। এনসিপি বলছে, এই সনদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় আইনি ভিত্তি পেলে, এটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি এই সময়ের মধ্যে তার ভিত্তি না দেওয়া হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে নামবে। জামায়াতের সঙ্গেও একই বিশ্বাস, তারা বলছে, এই সনদ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দলের একজন সহকারী মহাসচিব বলেন, “সংস্কার প্রয়োজন, এবং এটা অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত প্রতিশ্রুতি।” তারা জানিয়েছে, যদি এই মানা না হয়, তবে তারা শিগগিরই আন্দোলনে নামবে। তবে, বিএনপি কৌশলে অবস্থান পরিবর্তন করে বলছে, তারা এখন আলোচনায় অংশ নেবে এবং জানাবে কি প্রস্তাব আসে। তারা বলছে, “আমরা ঐকমত্যের সঙ্গে একমত, এবং তা বাস্তবায়ন হবে।” অতীতে, বিভিন্ন কমিশন গঠন করে সংস্কার প্রক্রিয়া চালানো হয়। সে সঙ্গে, স্থানীয় সরকার, বিচার বিভাগ, তথ্য অধিকার, দুর্নীতি দমনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, এই সনদ একটি রাজনৈতিক ডকুমেন্ট এবং তা তৈরি হয়েছিল সকল দলের সম্মতিতে। তবে, কিছু বিষয়ে দলগুলো মতভেদ রেখেছে এবং নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এই সকল বিষয়গুলো খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। সংযুক্ত সূত্র: বিবিসি বাংলা।