বাংলাদেশ সরকার শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ভারতের বাজারে চালের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত দুই দিনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চালের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপ কমানোর জন্য ৫ লাখ টন চালের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর, ভারতের বড় চাল ব্যবসায়ীরা লাভের আশাতে বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বাড়াতে শুরু করেছেন, যার ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই তথ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানতেন যে বাংলাদেশ সরকার চালের ওপর থেকে ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে তুলে নেবে। এ জন্য তারা পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের কাছেই চালের গুদাম তৈরি রেখে রেখেছিলেন। বাংলাদেশে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর, ট্রাকের মাধ্যমে দ্রুত চাল পাঠানো শুরু হয়।
প্রভাব পড়েছে ভারতের খুচরা বাজারেও, যেখানে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। স্বর্ণা চালের দামের মধ্যে প্রায় ৫ রুপি বাড়তি দেখা গেছে, যেখানে প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপি হয়েছে। মিনিকেট চালের দাম ৪৯ রুপি থেকে বাড়তে বাড়তে ৫৫ রুপি হয়েছে। রতœা চালের দাম ৩৬-৩৭ রুপি থেকে ৪১-৪২ রুপি এ পৌঁছেছে, এবং সোনা মাসুরি চালের দাম ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি হয়েছে।
রাইসভিলা নামে একটি চাল রপ্তানিকারক সংস্থার সিইও সুরজ আগরওয়াল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের শুল্ক প্রত্যাহার ঘোষণা পাওয়ার পরই ভারত থেকে চালের ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করেছে। তিনি যোগ করেন, ‘লজিস্টিকভাবে ও খরচের দিক থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলপথ দিয়ে চাল রপ্তানি বেশি লাভজনক, তাই উত্তর প্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের মিলাররাও এই পথ বেছে নিয়েছেন।’
অন্ধ্র প্রদেশের চাল মিলার সিকে রাও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে আমার ট্রাকগুলো বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত।’
বাংলাদেশের এই শুল্ক প্রত্যাহারের মূল লক্ষ্য হলো অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির ক্ষুদ্র ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়া। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বাংলাদেশে চালের দাম প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে দেশের চাহিদা মেটাতে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল।
চাল রপ্তানিকারক সংস্থা হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার বলেন, বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ অতিরিক্ত থাকায় ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সরকারি ও বেসরকারি গুদামে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কিছুটা কমে ছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চাল রপ্তানি ভারতীয় বাজারকে মন্দা থেকে উঠতে সাহায্য করবে, কারণ এটি নতুন চাহিদা সৃষ্টি করেছে এবং বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসের অস্থায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।’