গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গণপিটুনির শিকার হন আজিজুর রহমান নামে এক রিকশাচালক। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জনতার দারুণ আক্রমণের শিকার হন। পুলিশ তাকে গণপিটুনির পর উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার পর থেকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। অনেকে আজিজুর রহমানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং বলছেন, এই ধরনের অসহিষ্ণুতা এবং জনতার অন্ধভাবে মান্যতা দেওয়ার প্রবণতা ডিজিটাল যুগের সমাজে বড় ধরনের সমস্যা ঘটাচ্ছে।
অভিনেত্রী বাঁধন তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আপনাদের কে অধিকার দিয়েছে মানুষের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার? শেখ হাসিনার মতো আচরণ করার চেষ্টা করবেন না— দেখেছেন তো শেষ পর্যন্ত তাঁর কী পরিণতি হয়েছে? তাঁর পতনের পর আমি ভাবতাম মানুষ কিছু শিক্ষা নেবে। কিন্তু না, এখনও সেই অন্ধ মানসিকতা রয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা বলে দেওয়ার কে, মানুষ কাকে সমর্থন করবে, আর কাকে নয়? কারও উপর আপনারা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই। প্রত্যেকের নিজস্ব বিবেক ও বিচার-বুদ্ধি আছে। কেউ যদি শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়, সেটা তারই অধিকার। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার নেই। কাউকে ‘ভুল’ বলে দাগিয়া দেবেন না। নিজের মতের সঙ্গে মিলছে না বলে অন্যদের খারাপ বলার চেষ্টা করবেন না।’
বাঁধন এও বলেন, ‘একটু সত্য কথা বলি—এখনকার সময়ে মানুষ মিথ্যা, সস্তা গুজব ও হুমকি দিয়ে পরিচালনা সম্ভব নয়। সমাজ বদলের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষ এখন আরও সচেতন, তারা চোখ-কান খোলা রেখে সব কিছু দেখে ও শুনে। একজন সত্যিকার নেতা হয় একে অনুপ্রাণিত করে, তিনি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ না করে, কথা শোনে এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে এগিয়ে যায়। তারা গুজব ছড়ায় না, বিশ্বাস গড়ে তোলে।
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘ক্ষমতার মোহে বিভ্রস্ত হবেন না। ভাববেন না, এখনও মানুষকে চালনা করা সম্ভব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষমতার সুতোটাও কেটে গেছে। জেগে উঠুন, না হলে ইতিহাস আরও কঠোরভাবে আপনাকে শিক্ষা দেবে।’
সবশেষে বাঁধন বলেন, ‘একজন সত্যিকারের নেতা ও মানবিক মানুষ হন। নইলে আপনি শেখ হাসিনার মতো ব্যর্থ প্রতিলিপি হয়ে যাবেন। বিশ্বাস করুন, সেই ট্র্যাজেডির আরও কোন প্রয়োজন নেই।’