আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্য নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপটি অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম ও ভোটগ্রহণের জন্য অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা সময়মতো সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের পর নির্বাচন কমিশন এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারে।
সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক সংসদীয় এলাকার সঠিক ভৌগোলিক সীমান্ত গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এই গেজেটে দেশের ৩০০টি সংসদীয় এলাকার সীমানা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হবে। পাশাপাশি, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর নাগাদ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) ম্যাপও প্রকাশ করা হবে, যা ডিজিটাল ফরম্যাটে সেসব এলাকার সীমানা নির্ধারণে বলবৎ থাকবে। এর মাধ্যমে ভোঁগোলিক নির্দিষ্টতা, স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়াও পুরোপুরি চলমান। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিলে, তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো, কারাবন্দি ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন এই ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচনের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ব্যক্তিদের কাছে বিলট পেপার পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে তারা ভোট দিতে পারেন। এই পদক্ষেপটি নাগরিকের ভোটাধিকার সংরক্ষণে এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে, অর্থাৎ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এই সংস্থাগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সচেতনভাবে উপস্থিত থেকে নির্বাচনকে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ রাখার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তাছাড়া, নির্বাচন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের সাথে সভা আলোচনা অব্যাহত আছে। এই কার্যক্রম আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আজ থেকেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা চলে ভোটের কয়েকদিন আগে পর্যন্ত। পাশাপাশি, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ ও বিতরণ প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য স্বচ্ছ ও টেকসই ব্যালট বাক্সও চূড়ান্ত করা হবে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। এছাড়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার কাজ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত হয়। ভোটের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য নানা দিক বিবেচনা করে প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব ধাপ সময়মতো এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হলে নির্বাচন সুষ্ঠু, আওতাভুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক হবে। তারা বিশ্বাস করেন, এই ধারাবাহিক উদ্যোগ ও প্রস্তুতির মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও স্বচ্ছ করে তুলতে পারবেন।