গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয় এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের মুখোমুখি দাঁড় করানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুক্রবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাকি বলেন, আমাদের জন্য নির্বাচন সম্পন্ন করা জরুরি যাতে আমরা সংস্কারগুলো কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে পারি। একইসঙ্গে বিচারকে এগিয়ে নিতে হলে নির্বাচন অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক উত্তরণের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এটি আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করা აუცილ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সংস্কার অগ্রগামী হয়েছে, সেই চেতনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য যেন একটি জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে এই সংস্কারসমূহের আইনি নিশ্চিতকরণ হয়, যার জন্য দ্রুত ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সাকি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে কাজ করে একটি কার্যকর মনিটরিং কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি নির্বাচনী পরিবেশে কোন রকম বিঘ্ন ঘটলে তা প্রতিহত করবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের মূল ভিত্তি। এই পথে এগিয়ে গেলে দেশের গণতন্ত্র আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিভ্রান্তি, দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত সকল শত্রুতা নির্মূল হবে।
তিনি আরও জানান, আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরও পুরো শাসনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বদলানো যায়নি। শাসন কাঠামো ও সাংবিধানিক ক্ষমতার কাঠামো পরিবর্তন ছাড়া বাস্তব পরিবর্তন আসবে না—এ সামঞ্জস্য তিনি বারবার দাবি করে এসেছেন।
সাকি বলেন, ১৯৭২ সালে প্রস্তুত করা সংবিধানও ১৯৭১ সালের আকাঙ্ক্ষাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি। এই সংবিধান স্বৈরতান্ত্রিক ছিল, যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ হয়েছিল এক ব্যক্তির হাতে। সেই সাংবিধানিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে একের পর এক স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এখন সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তনের অপেক্ষা বেশি জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
সাকি বলেন, এখনও দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের ইতিহাসকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা করছে, নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিচার—সংস্কার ও নির্বাচন প্রতিষ্ঠার যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে কিছু গোষ্ঠী পুরোনো ফ্যাসিস্ট কায়দায় নিজেদের মত চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে এবং মব রাজত্ব কায়েমের সহায়তা করছে। তিনি মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ও দক্ষিণপন্থি উত্থানের সব অপপ্রয়াসই জনগণের প্রবল প্রজ্ঞা ও অধিকারবোধের বিপরীতে।
তিনি বলেন, জনগণ চায় একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেখানে তাদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়। তিনি আর অভিযোগ বা অস্বীকৃতিকে প্রশ্রয় দেননি। সবাইকে একত্রে এই ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হবে, সেটাও অবশ্যই আইনি ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করে। অন্যথায় আমাদের নিজেরাও ফ্যাসিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি আশাবাদী, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে এবং কোনও অপশক্তি এই উন্নয়নকে থামাতে সক্ষম হবে না।
উল্লেখ্য, গণসংহতি আন্দোলন ২০০২ সালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠন সমন্বয়ে প্রথম প্রকাশ পায়, যার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের স্বার্থে গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তোলা। নানা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০১৫ সালে正式ভাবে এটি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।