খুলনার আঠারোবেঁকী নদীর তীরে অবস্থিত রূপসার নেহালপুর মিস্ত্রিপাড়ার একটি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভূপৃষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও চৌকি দোকানদার ও নির্মাণ ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক দখল করে ইট ভাটার জন্য মাটি দিয়ে পট (ইট তৈরির আংটি) বানিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা দখল করে ব্যবসা বিলীন করার জন্য এলাকাবাসী বিভিন্ন বার চেষ্টা করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারি এই রাস্তা জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দখলমুক্ত করা জরুরি। তারা হুঁশিয়ার করেছেন, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে তারা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা দখল করে ইট তৈরির জন্য পট বানিয়ে ব্যবসা করায় এলাকাটির জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এ রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করত এক সময় সৎকারের জন্য শ্রমজীবী মানুষজনও, কিন্তু এখন দখলদাররা এ রাস্তাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এলাকাবাসীর মধ্যে ক্রীড়া সংগঠক সাধন দে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী রাস্তা। অনেক বছর আগেও এই রাস্তা দিয়ে নেহালপুরের শ্মশানে মরদেহ আনা হত, কিন্তু এখন দখল ও ব্যবসার কারণে এই সড়ক অচিরেই বিলীন হওয়ার পথে।
আরেক বাসিন্দা মোঃ রাকিব শেখ বলেন, এটি ছিল পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে এমএনএস ব্রিকসের মালিক মিঠু এবং এর আগের মালিক সাত্তার এই রাস্তা দখল করে ইট তৈরির জন্য ব্যবহার করছেন। এর ফলে রাস্তার দখল ও ধ্বংসের কারণে এলাকাবাসির দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়।
এমএনএস ব্রিক্সের ম্যানেজার মিজানুর রহমান দাবি করেন, মালিক মিঠু এই ইটভাটার জন্য পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন এবং সরকারি রাস্তা দখলের বিষয়টি তার জানা নেই বা কোনো আপত্তি করেননি। তিনি বলেন, সরকার চাইলে রাস্তা ফিরিয়ে দিতে পারে, এতে কোনো সমস্যা হবে না।
অপরদিকে, স্থানীয় সার্ভেয়ার মোঃ খবিরুদ্দিন জানিয়েছেন, এটি একটি জেলা পরিষদের রাস্তা। মানুষের নিরাপদ চলাচলের জন্য এই রাস্তা গুরুত্বぽূর্ন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তিনি রাস্তার সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এখনও কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা যুবদলের সদস্য ও নৈহাটী কালিবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির বিলাহ বলেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি রাস্তা দখল করে দুই বছর ধরে ইট তৈরির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা, যা দ্রুত বন্ধ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাবেক সিবিআই ব্রিকসের মালিক আঃ সাত্তার সাহেব জলজ্যান্ত সময়ের বিভিন্ন সময়ে সরকারি রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে রাস্তা মুক্ত করার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি। দুই বছর আগেও সিবিআই ব্রিকসের মালিকের কাছ থেকে মোঃ মিঠু এই রাস্তা লিজ নিয়ে একইভাবে দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা আক্তার রিক্তা বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সরেজমিন তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।