গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন—এ সবই বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। তিনি স্পষ্ট করেছেন, বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজনের মাধ্যমে দেখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুক্রবার সকালে গণসংহতি আন্দোলনের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের জন্য নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি হচ্ছে সেই মাধ্যম যার মাধ্যমে আমরা বিচার এবং সংস্কার সম্পন্ন করতে পারি। নির্বাচন ছাড়া মানুষ অন্ধকারেই থাকবেন, অন্ধকারে থাকাকালীন অন্যায়ের মোকাবিলা করাও কঠিন। তিনি আরও যোগ করেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, তাই সবার উচিত এই বাস্তবতার স্বীকৃতি ও গ্রহণ করা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং এই মাধ্যমে আমরা যে সংস্কারের পথচলা শুরু করেছি, সেখানে একটি জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে, যা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেছেন, দ্রুতই দেশের আইনি বাধ্যবাধকতা ও সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, যাতে নির্বাচনী পরিবেশ সুস্থ, স্বাধীন ও নিরপক্ষ হয়। এই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং তারা আগামী দিনগুলোতে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন তারিকভাবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বা লাপেটের কোনো ঘটনা ঘটলে তা সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে জনগণের ভোটাধিকার, অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যখন বাংলাদেশ সময়ের চাপে রয়েছে। ২০২৪ সালে জাতীয় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী শাসন পতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, এই শাসনব্যবস্থার একেবারে উচ্ছেদ হয়নি। তিনি বলেন, স্বৈরশাসন আর ফ্যাসিস্ট শাসন কেবল পতনের মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে না, শাসনব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান ১৯৭১ সালের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি; বরং এটি ছিল স্বৈরতান্ত্রিক, যেখানে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল এক ব্যক্তির হাতে। এই স্বৈরাচারী কাঠামোতেই একের পর এক শাসন, হত্যা ও জুলুম চালানো হয়েছে। এই কারণে এখন জরুরি সংশোধনী ও কাঠামোগত পরিবর্তন।
সাকি জানান, এখনো দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের সত্যতা অস্বীকার করার চেষ্টায় লিপ্ত। তারা গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশি ও দেশীয় ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, অর্থের যোগান দিচ্ছে এবং বিভিন্ন অপতৎপরতা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে মব রাজত্ব কায়েম করতে কিছু গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। তিনি বলেন, একদিকে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারিত্ব, অন্যদিকে দক্ষিণপন্থি উত্থানের সব ধরনের ষড়যন্ত্রই দেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার বিরুদ্ধ।
সাকি emphasizing গেছেন, জনগণের মূল চাওয়া একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যেখানে অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত থাকবে। তিনি বলেন, অন্যায়ের পাশে দাঁড়াবেন না, কোনোভাবেই ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রে প্রশ্রয় দেবেন না। আইন ও গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় রেখে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে, অন্যথায় নিজেদেরই ফ্যাসিবাদের শিকার হয়ে পড়তে পারেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে এবং অপশক্তি এই অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে পারবেন না।
অন্তর্বর্তী সময়ে, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গণসংহতি আন্দোলন ২০০২ সালে ছাত্র, শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনের যৌথ রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে যাত্রা শুরু করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা এবং বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। ২০০২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ার পর, ২০১৫ সালে তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে গণসংহতি আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।