গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল পুরো শহর গাজা সিটিকে আরো একবার যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। আজ শুক্রবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা সেখানে প্রাথমিক আক্রমণ শুরু করেছে। একই সঙ্গে, গাজা শহরে এখন থেকে কোন ত্রাণ ও সহায়তার জন্য বিরতি দেয়া হবে না বলেও তারা জানিয়ে দেয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র আভিচায় আদ্রি একে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি না। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আক্রমণ চালানো শুরু করেছি এবং গাজা সিটিতে হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। গাজার উপকণ্ঠে এখন সেনা ও ট্যাংকের উপস্থাপনাও দৃঢ়।’
বলা যায়, এর আগে ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে কৌশলগত বিরতি বাতিলের ঘোষণা দেয়। সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে গাজায় আর কোন সামরিক বিরতি কার্যকর থাকছে না। এই পরিস্থিতিতে গাজার উপত্যকা সত্যিই একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’
গত মাসে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইসরায়েল প্রথমে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করেছিল, যাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি গাজায় সাহায্য পাঠাতে পারে। তবে, আগস্টের শুরু থেকে তারা হামলা অব্যাহত রাখে এবং শহরটিকে ধ্বংসের পথে চালায়। শহরের বিভিন্ন অংশে হামলা চালিয়ে গাজার মানুষকে অসহায় করে তুলতে থাকেন তারা।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার আক্রমণে প্রতিদিনই বেড়ে যাচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘর্ষ আরম্ভের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৩,০০০ ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কমপক্ষে ৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া, ২৪৪ জন আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সংখ্যা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষের মধ্যে নিহতের মোট সংখ্যা এখন ৬৩,০২৫ জন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এখন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯০ জনে।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যারা অপুষ্টি ও অসহায়ত্বের কারণে মারা গেছেন। এই পরিস্থিতি বিবেচনায়, অক্টোবরে এখন অবধি ক্ষুধাযুক্তির কারণে নিহতের সংখ্যা ৩২২ জন। এর মধ্যে ১২১ জনই শিশু।
গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফলে, ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত সাহায্য পাঠাতে গিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,০০,২৩৫ জন। আহত হয়েছেন ১৬,০২২৮ জনের বেশি। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
গত ২৭ মে গাজার হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে, প্রতিদিনই আহত-নিহত ঘটছে। তাদের চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
সুত্র: আল জাজিরা।