দু-একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রোডম্যাপে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যদি কোন অস্বচ্ছতা বা সংশয় উপস্থাপিত হয়, তবে সেটা আমাদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব। আমাদের কোনও অবস্থায় ঐক্য বিনষ্ট হবে না, বরং আলোচনা মাধ্যমে বিভ্রান্তি ও দ্বৈতভাব দূর করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও জানান, আমরা চেষ্টাচরিত্রা করছি যেন কোনো গুমের ঘটনা না ঘটে। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বলছি, জনগণ আমাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিলে, তাদের গুমের মতো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি প্রতিরোধে আমরা যা দরকার সেটা করব। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছি যেখানে গুমের শিকার হয়ে কাউকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গুম হওয়াদের স্মরণে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমি ভাগ্যবান যে আপনাদের সাথে কথা বলতে পারছি। আমার কিছু সহকর্মীর ভাগ্য হয় না, যারা এখনো নির্যাতনের শিকার।
অপরাধের জন্য বিগত সরকারের কোনো অনুশোচনা নেই বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, তাদের কারণে মানুষ তাদের অপরাধ স্বীকার করতে পারছে না। বরং জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হয়েছে। এরপরও কি মানুষ তাদের রাজনীতিতে গ্রহণ করবে? কেউ ক্ষমা করেনি এবং তারা ক্ষমা চায়নি।
তিনি আবারো জানান, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনী রোডম্যাপে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে। যদি কিছু সংশয় থাকে, তাহলে আলোচনায় বসা উচিত। ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা বন্ধ করে একসাথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নেন হুম্মাম কাদের চৌধুরী, যা বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরে গুমের শিকার কয়েকজনকে ফিরে পেয়েছি। অন্যদের ফিরে পাওয়ার আশাও ছিল, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তিনি বললেন, সরকার আসার সময় বহু আশা ছিল যে তারা গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনবে বা তাদের খোঁজ দিয়ে সমস্যার সমাধান করবে। এখন পর্যন্ত কোনও তথ্য দেয়নি।
গুম থেকে ফিরে আসা শায়রুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১৭ সালের মার্চে গুম হয়েছিলেন। ঐ সময় আরও চারজনের সাথে একই সময় গুম হয়েছিলেন। তিনি জানান, ফিরিয়ে আনার পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো সয়ে বেড়াচ্ছেন, কারণ মামলা থেকে অব্যাহতি চান। তিনি আরও জানান, তার তিন বন্ধু এখনও গুমের শিকার, যার সাক্ষী তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, যারা তাকে গুম করেছিল, তারা এখনো চাকরি করছে।
বিএনপির আন্দোলনের সময় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গুম হন শ্রমিকদল নেতা মো. ফজলুর রহমান কাজল। পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানা যায়। তার ছেলে সজল বলেন, তার বাবার চায়ের দোকান থেকে তুলে নেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে তাকে কারাগারে দেখতে পারেননি। পরে খবর পাওয়া যায়, তাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা গিয়ে দেখেন, তার বাবা মারা গেছেন, তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে কিছু খাইনি, কারাগার অভ্যন্তরে নির্যাতন চলছিল।’ সজল কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং অভিযোগ করেন, তার বাবাকে ধরপাকড়ের সময় থেকে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বর্তমানে তার পরিবারের এই ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতি সততা ও সাহসের প্রতীক।