নার্বিআর চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান বলেছেন, ন্যূনতম কর আইনটি একটি কালো আইন হিসেবে বিবেচিত। তিনি এই মন্তব্য করেন রাজধানীর গুলশানে এক সংলাপে, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। এ সংলাপের শিরোনাম ছিল ‘করপোরেট কর ও ভ্যাটে সংস্কার: এনবিআরের জন্য একটি বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’।
চেয়ারম্যান বলেন, বেশ কিছু সময় ধরে ন্যূনতম করের বিষয়টি নিয়ে আলাপ চলে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি অস্বাভাবিক আইন, কারণ করের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত মুনাফা। কিন্তু এর পরিবর্তে নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যা খুবই সমস্যাজনক। তিনি আরও বলেন, আমাদের যখন একটি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সিস্টেমে পৌঁছানোর কথা, তখনই এই ধরনের আইন সংশোধনের প্রয়োজন। এবার আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য সহজে চলার পরিবেশ তৈরির উপর গুরুত্ব দিয়েছি, কারণ ব্যবসা সহজ না হলে দেশের কর আদানে বাধা সৃষ্টি হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক মোঃ তামিম আহমেদ।
চেয়ারম্যান বলেন, করছাড় ও করহারে অতিরিক্ত গিয়ে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ছে বলে মনে হয় না। কারণ, দেশের বড় বড় করদাতাদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলছেন, দেশের বিভিন্ন কর প্রণীতিতে অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত করছাড়ের কারণে করের মূল অনুপাত কমে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের জন্য মোটর চালাতে থাকা ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
আইনের অপ্রতুল কার্যকারিতা ও করসংক্রান্ত দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে করছাড়ের ধারাবাহিক প্রথা চালু থাকায় করের মূল হার বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাপক করছাড় দেওয়ার ফলে দেশের রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা দেশের জন্য ঝুঁকি স্বরূপ।
চেয়ারম্যান জানান, বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তানের কর-জিডিপি অনুপাত যেখানে ১২.২ শতাংশ, আমাদের দেশের এ বছর তা হয়েছে মাত্র ৬.৬ শতাংশ, যা অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন রাজস্ব সংগ্রহ অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের উপরে ঋণের বোঝা কমানোর জন্য ও দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প চালানোর জন্য করতালিকা বাড়ানো জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় এনবিআর অটোমেটেড সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা করছে। এর ফলে, ভ্যাট ও কর রিটার্ন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে এবং অডিটের মানোন্নয়ন হবে। বর্তমানে অডিটের জন্য মানুয়াল পদ্ধতি চালু থাকলেও এটি বন্ধ করা হয়েছে, আর অডিট ঝুঁকি ভিত্তিক বা автомат করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে এককালীন অডিটের ঝামেলা কমে।
করদাতাদের জন্য আরও সুবিধা আনতে তারা রিফান্ড অটোমেটেড করার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে কর প্রদান সহজ ও স্বচ্ছ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
একটি সিপিডির সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী বর্তমান কর হারকে ন্যায্য নয় মনে করেন এবং এটি তাঁদের ব্যবসার উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা। অংশগ্রহণকারীরা জানান, কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাব, দুর্নীতিও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা।
অতিরিক্ত জটিলতা ও অস্পষ্ট ভ্যাট নীতিমালা, প্রশিক্ষণের অনুপুষ্টি ও করের শ্রেণিবিন্যাসের জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সমস্যা। ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়।