খুলনার আঠারোবেঁকী নদীর তীরে অবস্থিত রূপসার নেহালপুর মিস্ত্রিপাড়ায় সরকারি রাস্তা জোরপূর্বক দখল করে ইট তৈরির জন্য পট (মাটি দিয়ে ইটের ছাই বা বিন্যাস) তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নেহালপুর থেকে পুরান হাট পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তাটি কেটে সেখানে ইটের পট বানিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এমএনএস ব্রিকসের মালিক। এই ঘটনায় এলাকার সচেতন মহল জোর দিচ্ছেন সরকারি রাস্তা দ্রুত পুনরুদ্ধারে।
নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজিব বিশ্বাস বলেছেন, জনস্বার্থে এ রাস্তা অবিলম্বে দখল মুক্ত করে পুনর্দখল জরুরি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে, মোঃ সুজন নামে একজন বলেন, সরকারি রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালানো বন্ধ না হলে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন। হাবিবুর রহমান বলেন, এ রাস্তা দখলমুক্ত না করলে খুব শিগগিরই পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাস্তাটির গুরুত্ব আরেকটু ব্যাখ্যা করে সাধন দে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যদি কোনো মহৎ কাজ, যেমন সৎকারের জন্য মৃতদেহ শ্মশানে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন এই রাস্তা দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু দখল ও ইট তৈরির জন্য ব্যবহৃত পট বানানোর কারণে রাস্তা ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার পথে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেহালপুরের রাকিব শেখ জানান, এ রাস্তা ঐতিহ্যবাহী একটি পুরোনো রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এই রাস্তা দখল করে ইটের পট বানানোর মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিএনবি ব্রিকসের মালিক মিঠু। এর আগেও একইভাবে অন্য ব্রিকসের মালিক সাত্তার এ ধরনের অব্যাহত কার্যকলাপ চালিয়ে গেছেন।
মেসার্স এমএনএস ব্রিকসের ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, কোম্পানির মালিক মিঠু সাহেব পাঁচ বছরের জন্য ইটভাটা লিজ নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারি রাস্তা নিয়ে কোনও অজুহাত নেই। সরকার চাইলে রাস্তা সহজেই উদ্ধার করতে পারে।
নৈহাটীর সার্ভেয়ার মোঃ খবিরুদ্দিন বলেন, এটি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে অনেক গ্রামবাসী নদীর খেয়োঘাট পার হয়ে শহরে আসতেন। পূর্বে তিনি এই সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণের জন্য মেপে দিয়েছিলেন, তবে বর্তমানে কাউকে কিছু করার অনুমতি দেননি। উপজেলা প্রশাসনের নায়েবও রাস্তাটির সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন, তবে কার্যকর কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি।
খুলনা জেলা ছাত্রদলের সদস্য ও নৈহাটী কালিবাড়ি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির বিল্লাহ বলেন, জনসাধারণের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা কেটে ইট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। দুই বছর ধরে এমএনএস ব্রিকস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে এই রাস্তা পুনরুদ্ধার জরুরি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিবিআই ব্রিকসের সাবেক মালিক আঃসাত্তার সাহেব বছরের পর বছর এ রাস্তা দখল করে রেখেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর চাপের পরও তিনি নিষ্পত্তি করেননি। গত দুই বছর আগে, সিবিআই ব্রিকসের মালিক মোঃ মিঠু কোম্পানিকে পাঁচ বছরের জন্য ইট-ভাটা লিজ দিয়ে একইভাবে রাস্তা দখল করেন। এর কোনও সমাধান হয়নি।
উপজেলা প্রশাসনের নায়েব বর্তমানে জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছেন, তবে তিনি এ ব্যাপারে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়, যদি দ্রুত দখলমুক্ত না করা হয়, তাহলে কঠর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা আক্তার রিক্তা বলেন, দ্রুত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।