তিন বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্য হার কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। দেশ এখন দারিদ্র্যের হার Proximately ২৭.৯৩% বা প্রায় ২৮%, যা সরকারের হিসাবেও ২০২২ সালে ছিল ১৮.৭%। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-র এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণার নাম ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫।’ এই ফলাফল গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে প্রকাশিত হয়। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিলুর রহমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতি দারিদ্র্যও বেড়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫.৬%, তবে ২০২৫ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৫%। এর মানে হলো, গত তিন বছরে দারিদ্র্য দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখনও প্রায় ১৮% পরিবার যে কোনো সময় গরিব হয়ে যেতে পারে। এই গবেষণা মে মাসে ৮,০৬৭টি পরিবারের অর্থাৎ ৩৩,২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে।
বর্তমান তিন সংকটের প্রভাবও এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পিপিআরসি বলেছে, দেশে এখন তিনটি বড় ধরনের সংকট চলছে—কোভিড মহামারি (২০২০-২০২২), মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়া, ঘুষ কার্যক্রমও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গেল বছরের আগস্টের আগে যেখানে ৮.৫৪% মানুষ সেবা নিতে ঘুষ দিত, সেখানে এই হার আগস্টে নেমে এসেছে ৩.৬৯%-এ। তবে সবচেয়ে বেশি ঘুষ যায় সরকারি অফিস, পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে।
শহরের পরিবারে আয় কমেছে, কিন্তু খরচ বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের একটি পরিবারের গড় মাসিক আয় ছিল ৪০,৫৭৮ টাকা, যেখানে খরচ হয় ৪৪,৯৬১ টাকা। ২০২২ সালে এই পরিবারের আয় ছিল ৪৫,৫৭৮ টাকা। অন্যদিকে, গ্রামের পরিবারে আয় কিছুটা বেড়েছে, গড় আয় ২৯,০২০৫ টাকা, খরচ ২৭,১৬২ টাকা, যা ২০২২ সালে ছিল ২৬,১৬৩ টাকা। সার্বিকভাবে দেশের সাধারণ পরিবার গড় আয় ৩২,৬৮৫ টাকা হলেও খরচ হয় ৩২,৬১৫ টাকা, যার ফলে সঞ্চয় প্রায় নেই বললেই চলে।
খাবার খরচ এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা গড়ে ৫৫%। একটি পরিবারের মাসিক মোট খরচের অর্ধেকের বেশি খরচ হয় খাবারে, যা গড়ে ১০,৬১৪ টাকা। এছাড়া, প্রতি মাসে শিক্ষায় ১,৮২২ টাকা, চিকিৎসায় ১,৫৫৬ টাকা, যাতায়াতে ১,৪৭৮ টাকা এবং আবাসনে ১,৮৯ টাকা খরচ হয়।
হোসেন জিলুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় বড় অর্থনীতি নিয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি পরিকল্পনায় জনমুখী দৃষ্টি খুবই জরুরী। শুধু জিডিপির উন্নয়নই নয়, সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের আরও বেশি আলোচনা ও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
তাছাড়া, বর্তমান নানা সংকটের মধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এগুলির মধ্যে প্রথমটি হলো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝামেলা, যার জন্য নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, নারী প্রধান পরিবারগুলো সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে থাকায় তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা দরকার। তৃতীয়ত, ঋণের বাড়বাড়ন্ত বড় সমস্যা। চতুর্থত, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ক্রমবর্ধমান, যা এখনো ব্যাপক নয়, তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে। পঞ্চমত, স্যানিটেশন সংকট রয়েছে, যেখানে বর্তমানে প্রায় ৩৬% মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করছে। এর ফলে নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও এখন কঠিন বাস্তবতা রয়েছে। বেকারত্বের পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠছে, এজন্য তৎপরভাবে পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। এবারই সময় উদ্যোগ নেওয়ার, কারণ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এই বিষয়ে গভীর আলোচনা এবং পদক্ষেপ জরুরি।