জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান খান আগামীকালিন কর আইনকে একে ‘কালো আইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে অনুষ্ঠিত একটি সংলাপে ‘করপোরেট কর এবং ভ্যাটে সংস্কার: এনবিআরের জন্য একটি বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ শিরোনামে এই বক্তৃতা দেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ন্যূনতম কর আইন অবশ্যই একটি অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্ছিত আইন, যা দেশের ব্যবসা ক্ষেত্রের জন্য ক্ষতিকর। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, কর should be based on মুনাফার উপর, তবে বর্তমানে সর্বনিম্ন কর নির্ধারণের প্রক্রিয়া এর বিপরীত। এর ফলে সমস্যা দেখা দেয়, যখন এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কর আহরণ কমে যায়। এ বছরের প্রথমদিকে আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কারণ, যদি ব্যবসায়ীদের জন্য কর সহজ ও সুবিধাজনক করে ধরা না হয়, তবে দেশ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ কঠিন হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্র ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষক মোঃ তামিম আহমেদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, করের ছাড়ের প্রবণতার কারণেই কর-জিডিপি অনুপাত কমে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন খাতে সরকারের দেয়া করছাড়ের ফলে কর আদায়ের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক করছাড়ের নীতি চালু রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতির জন্য জরুরি হলেও এর ফলে করের মোট পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক ট্যাক্স হিল্ড ও এক্সেম্পশন চালু থাকায় কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।
এনবিআর চেয়ারম্যান অতিরিক্ত বলেন, যদি করভুক্তির আওতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে করের হার কমানো সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর ও ভ্যাট রিটার্নের ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা চলছে, যাতে বোতাম চাপলেই সব কিছু স্বয়ংক্রিয় হয়। এতে অডিট ও করের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারবে। বর্তমানে ম্যানুয়াল অডিট পদ্ধতি প্রকৃত সমস্যা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, অডিট ঝুঁকি নির্ধারিত ভিত্তিতে হবে, আর যতদিন ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা যাবে না, ততদিন অডিট ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে।
অবশেষে, তিনি বলেন, করের আওতা বাড়ানো গেলে করহার ও ভ্যাট হার কমানো সম্ভব হবে। একইসঙ্গে রিফান্ড অটোমেটেডভাবে করদাতার অ্যাকাউন্টে চলে যেতে পারে।
অধ্যয়নে তুলে ধরা হয়, একটি সম্প্রতি পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, বর্তমান কর হার ‘অন্যায্য’ এবং এটি তাদের ব্যবসার জন্য বড় বাধা। অধিকাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবে তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। পাশাপাশি, ৭২ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কর প্রশাসনে দুর্নীতি তাদের জন্য বড় সমস্যা। ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পরিচালিত এ সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হন, যা অনেক সময় উসকানি দেয়।
ভ্যাট সংক্রান্ত জরিপের ফলাফল বলছে, ৭৩.৫ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, জটিল ভ্যাট আইন তাদের জন্য অন্যতম প্ৰতিবন্ধকতা, এছাড়া অস্পষ্ট নীতিমালা, কর কর্মকর্তাদের সীমিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণের অভাব ও পণ্য ও সেবার শ্রেণিবিন্যাসের জটিলতা তাদের ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ গবেষণায় অংশ নেওয়া ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান ঢাকার আশপাশের এলাকার, যা দেশব্যাপী ব্যবসা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত।