২৩ মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার মানুষ আবার রক্তাক্ত হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ এখন কাতারে থাকলেও, গাজায় চলমান সামরিক অভিযান নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনের অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী উপত্যকায় আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে সাতজন নিহত হয়েছেন উপত্যকার দক্ষিণে ত্রাণ সংগ্রহের সময়।
ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণের এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে যেতে বলা হয়। তা না মানলে জীবনহানির সতর্কতা দেওয়া হয় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাজার বন্দরে ইসরায়েলি হামলায় দুই ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন। গাজার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-মুখাবারাত এলাকাতেও ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে বেশ কিছু বাস ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ এলাকাতেও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে অনেক বাড়িঘর ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং দুজন নিহত হন।
অন্যদিকে, গাজার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ইসরায়েলি সেনারা তীব্র হামলা চালাচ্ছে। স্থানীয় উদ্ধার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত ৭২ ঘণ্টায় গাজায় পাঁচটি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। ওই ভবনগুলোতে ছিল দুই শতাধিক ফ্ল্যাট। এ ছাড়া, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য গড়ে তোলা ৩৫০টিরও বেশি তাঁবু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।
এদিকে, গত সোমবার গাজা শহরের জামাল আবেদ স্ট্রিট থেকে ফিলিস্তিনিদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি প্রশাসন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই এলাকায় হামলার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। একারণে, দ্রুত সময়ে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের ‘নিরাপদ’ তালিকায় থাকা অস্থায়ী এলাকা আল-মাওয়াসিতে যেতে বলা হয়েছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে আল-মাওয়াসিকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে প্রচার করা হলেও, সেখানে বেশ কিছু ভয়ঙ্কর অ্যাটাক চালিয়েছে আইডিএফ। যুদ্ধের শুরুতে এই এলাকায় বাস করত ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ, তবে বর্তমানে এই এলাকাটি মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটার হলেও বাস করছেন এর দেড় লাখের বেশি মানুষ, যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় তৃতীয়াংশ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬৪,০০০, যেখানে শিশুর সংখ্যা ২০,০০০ এর বেশি। মানুষ এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে, নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় চাইছে, কারণ এই সংঘর্ষের ছিন্নভিন্ন পরিস্থিতিতে গাজা আজ জেগে উঠছে এক বিভীষিকা হয়ে।