দেশের উপরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয়, যা ‘ঈশান ২’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, এই বৃষ্টিবলয় ১৪ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় থাকবে। এই মৌসুমি ঝরঝরি আকাশের নিচে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বর্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের এলাকাগুলো। তবে এর প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়াবে এবং তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে দেবে, যা দুর্যোগের পাশাপাশি কিছু স্বস্তিও বয়ে আনতে পারে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে বিডব্লিউওটি জানিয়েছে, প্রচণ্ড গরমের মাঝে দেশজুড়ে এই শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের অনেক স্থানে এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, বর্ষণ বা বজ্রসহ ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বিস্তৃতি রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। এর একটি শাখা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। ফলে মহাবিপদের পাশাপাশি কিছু অঞ্চলে স্বস্তিরও আসা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বৃষ্টিবলয় দেশের কয়েকটি অঞ্চলে জনজীবন কিছুটা ব্যাহত করতে পারে। উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাবধান থাকতে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উল্টো, অনেক অঞ্চলে দীর্ঘদিনের তীব্র গরম ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার অবসান হতে পারে, যা জনজীবনে স্বস্তি এনে দেবে। মনে করা হচ্ছে, ‘ঈশান ২’ এর প্রভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গেলে অনেকেই আরাম পাবেন।
বৃষ্টিবলয় কতটা শক্তিশালী হবে এবং এর ফলে কত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা মূলত এর সক্রিয়তা ও প্রভাবের উপর নির্ভর করবে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ধারা দেখে মনে হচ্ছে, এই ধরণের বৃষ্টিবলয় এখন আরও প্রায়ই এবং বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতি নেয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও বিডব্লিউওটি সাধারণ মানুষের প্রত্যেককে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট অনুসরণ করার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।