ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যত জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এ প্রজন্ম বর্তমানে দুর্বৃত্তায়িত ও চাঁদাবাজী রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে পরিবর্তনের জন্য কিছু করার প্রত্যাশা করছে। বুধবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথ’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মান্না বলেন, রাজনীতি এখন শুধু মিথ্যাচার, চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে রূপ নিচ্ছে, যা টেকসই নয়। তিনি আশ্বস্ত করেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, কারণ জনগণ এখন বিকল্প খুঁজছে।
ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মতো অপ্রস্তুত দলগুলো এখন শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা আগে অনেক ভয়ংকর ছিল। এখন তারা মাথা উঁচিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে এবং বড় দলগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এর পিছনে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা কাজ করছে, যা অনেক কিছুই পরিবর্তনের সংকেত দিচ্ছে।
তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানুষের প্রত্যাশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেন, ভোট হবে কি না? তবে ডাকসু নির্বাচন দেখিয়েছে পুরোপুরি সুষ্ঠু ভোট সম্ভব এবং এটি এখন জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য। ছাত্রসমাজের সাহসিকতা প্রশংসনীয়, যা আগের প্রজন্মের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
বক্তা উল্লেখ করেন, অতীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়াতে পারতেন না, এখন তারা সাহস করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সূচক এটাই যে, এখন আর বিশাল জনসভা নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়া ও নতুন প্রজন্মের ভাবনায় রাজনীতি গড়ে উঠছে। এই প্রজন্ম প্রথাগত দখলদার ও প্রোটোকল-ভিত্তিক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে এবং বোঝে, রাজনীতি মানে আন্তরিকতা, সংগ্রাম ও অঙ্গীকার; এটি লুট ও ক্ষমতার শর্টকাট পথ নয়।
মান্না আরও বলেন, ছাত্ররা ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধাবাদের পথে হাঁটলেও, ছাত্ররা পরিবর্তনের নতুন দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য একে অন্যের সঙ্গে ঐক্য ও সংস্কার জরুরি। সংকট নিরসনে সুপ্রিম কোর্টের রায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যা সব দলেরই মানতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি হালকাভাবে না নেওয়া উচিত। এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত এক সংগ্রাম। তাই সবাইকে সৎ, অংশগ্রহণমূলক ও সংস্কারমুখী রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর নির্বাচন ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
আলোচনা সভায় কিছু মতের দ্বিমতও উঠে আসে। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যদি ডাকসুর মতো ফল অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে হয়, তবু চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতির সফলতা বা ব্যর্থতার সংজ্ঞা মনে করা ভুল। এটি একটি সামান্য বড় নির্বাচন, যা অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই। তিনি আরও বলেন, বৃহৎ ভোটপ্রবাহের বিপরীতে চাইল্ডোটের সংখ্যা খুবই কম।
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়িত প্রশাসন গঠিত হয়েছে, গণপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন কাঠামোগত ও আইনগত সংস্কার, যা সরকারের অঙ্গীকার ছিল।
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ও রাজনৈতিক অপরাধের মাঝে কিছু অভিজাত পরিবারের সদস্যরা সুবিধা নিচ্ছেন, তবে আন্দোলনের সংগ্রাম ভুলে গেছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে এবং দিদারুল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় অংশ নেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, যেমন – গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল-াহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য আকবর খান, ও অন্যান্য।