নেপালে বিক্ষোভ ও সংঘাতের পরবর্তী পরিস্থিতি বর্তমানে বেশই অস্থির। রাজধানী কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এরই মধ্যে, দুই দিন ধরে চলা আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়েছে বলে দাবি করেছে জেনারেশন-জেড (জেন-জি) বিক্ষোভকারীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে নেপাল। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের মতো ঘটনার কারণে জেন-জির আন্দোলনে সরকারের পতন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় এই আন্দোলন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, প্রধানমন্ত্রী কীপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
জেন-জিরা যা চেয়েছিল, তা সফল হয়েছে, তবে এর মধ্যেই বিতর্কের সূোর হাটে উঠেছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা কোনও সহিংসতা করেনি, বরং দুষ্কৃতকারীরা বা সুযোগসন্ধানীরা এই আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করেছে। তারা অভিযোগ করেন, ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীও সমর্থন দিয়েছে এসব দুষ্কৃতকারীদের। আন্দোলনকারীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে এবং তারা নাগরিক নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ রক্ষাে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে কাজ করছে। এদিকে, বুধবার আর কোনো কর্মসূচি নেই বলেও জানানো হয়েছে।
বুধবার কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত কিন্তু বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন এখনো আগুনে জ্বলছে। দেশটিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জেন-জির পক্ষ থেকে এক ছাত্রনেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা নতুন দাওয়ার তালিকা তৈরি করছেন।
জাতীয় পর্যায়ে আজ বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। সেনাবাহিনী সজাগ রয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে, লুটপাট ও হামলার সন্দেহে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নেপালের বিভিন্ন স্থানে সেনার চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং যানবাহনের পরিচয়পত্র পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। সংকেত দেওয়া হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে ঘরে থাকার জন্য।
নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাংশ রাজারাম বসনেত জানান, তারা মূলত ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে যারা লুটপাট ও আগুন লাগানোর মতো কাজে লিপ্ত। কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর দেশটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। সমাজচিন্তকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রয়োজন রয়েছে, তবে কে দায়িত্ব নেবেন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে মঙ্গলবার, জেন-জি বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছে, নেপালের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব অবশ্যই স্বাধীন, দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে হবে। নির্বাচন সরাসরি যোগ্য ও সততার ভিত্তিতে হতে হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর কোনো স্থান থাকবে না।
সামাজিক কর্মী কার্কি বলছেন, নিরপরাধ তরুণদের প্রাণ গেছে, দেশ গভীর অনিশ্চয়তার মাঝে রয়েছে। তাদের দাবি, এবার শান্তি চাই, দুর্নীতির অবসান দরকার, যা মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। সবাই মিলে এই পরিস্থিতি আর যেন না বাড়ে, সেজন্য সবাইকে সচেতন ও একবtrings।