নেপালে সহিংস বিক্ষোভের ফলে সরকারের পতনের পর তরুণ প্রজন্মের নতুন করে আশা ও প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। জেনারেশন জি নামে ডাকসুর এই তরুণরা দেশ מדר সংকটের সমাধানে নানা গুরুত্বপূর্ণ দাবিও তুলেছেন। তারা দাবি করছেন, নতুন সংবিধান রচনা, সরাসরি নির্বাহী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, এবং গত তিন দশকের এলোমেলো লুটপাটের ব্যাপক তদন্ত চালানো।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পতনের পর এই তরুণরা রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছে। তাদের দাবিতে শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, এবং গত তিন দশকে রাজনীতিবিদদের অবৈধ সম্পদ লুটের ব্যাপক তদন্ত ও দমন-পীড়নের পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত।
বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, যারা এই আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদেরকে জাতীয় শহীদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের পরিবারকে সম্মান ও সহযোগিতা দিতে হবে। পাশাপাশি ভোঙের বেকারত্ব দূর করা, অভিবাসন কমানো এবং সামাজিক বৈষম্য নিরসনে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন কোন ব্যক্তির বা দলের জন্য নয়। এটি দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের জন্য। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রয়োজন, তবে তা কেবল নতুন রাজনৈতিক কাঠামোতে সম্ভব হবে বলে মনে করেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনী তাঁদের প্রস্তাবগুলোর আশানুরূপ বাস্তবায়ন করবেন।
তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
• বর্তমান প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেওয়া, কারণ এটি সাধারণ জনগণের আস্থা হারিয়েছে। জনগণ, বিশেষজ্ঞ এবং তরুণদের অংশগ্রহণে সংবিধান সংশোধন বা সম্পূর্ণরূপে নতুন সংবিধান লেখা।
• অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও সুষ্ঠু, স্বাধীন, সরাসরি জনস্বার্থে নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করা।
• পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচিত নির্বাহী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, গত তিন দশকের লুট হওয়া সম্পদের তদন্ত ও অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রীয়করণ, এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ— এই পাঁচ খাতে কাঠামোগত সংস্কার গ্রহণ।
বুধবার ভোর থেকে সেনাবাহিনী কাঠমাণ্ডুসহ অন্যান্য শহরে মোতায়েন হয়ে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখে। অস্থিরতা দমন এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর আগের দিন ব্যাপক সহিংসতায় প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। তবে সরকারের পতনের পরেও অস্থিরতা কমেনি; পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী রাতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে এবং কাঠমান্ডু, ললিতপুর, ভক্তপুরসহ বেশ কিছু স্থান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে।
এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, কিছু গোষ্ঠী দুর্বৃত্তপনা চালিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে এবং সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করছে।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে, গত সোমবার জেনারেশন জি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ফলে অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নিহতদের জন্য দায় স্বীকার করে তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও জানায়। সেই ঘটনা ওলির পদত্যাগের পথ সহজ করে দেয়।