চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত খসড়া আচরণবিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। এই সভা দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়। তবে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে ও মতামত জানাতে বেশি সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগে শেষ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান।
সভা অনুষ্ঠিত হয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে। উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিনের নেতৃত্বে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সভায় প্রথমে আলোচনা করেন নির্বাচন কমিশনার আমির মুহাম্মদ নসরুলাহ, সেখানে উত্তপ্ত আলোচনা এবং প্রশ্নোত্তরপর্ব হয়। বেলা প্রায় ২টার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পুরো সভা ছেড়ে চলে যান, তাঁদের অভিযোগ ছিল যে, শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয় নি।
সভায় উপস্থিত ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আচরণবিধি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী নানা প্রশ্ন করেছেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তেমন সুযোগ করে দেননি। এ কারণেই তাঁরা আলোচনা থেকে বাদ পড়ে চলে গেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কেউ চাইলে লিখিতভাবে অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারে, যা তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
সভা পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আচরণবিধি, গঠনতন্ত্র, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে মতামত ও প্রশ্ন করেছেন। কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন করার সুযোগ পাননি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী মিজानুর রহমান প্রশ্ন করেন, স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির উত্তরসূরিরা কি চাকার মধ্যে চাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, কারণ এ বিষয়গুলো গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়টি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশনের বিবেচনায় থাকবে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) যুগ্ম-সদস্য সচিব আশরাফ চৌধুরী বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ সহ মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যা তাঁরা স্বাভাবিক মনে করেন না। এ সময় সঞ্চালক অধ্যাপক আরিফুল হক বলেন, এটি পূর্বনির্ধারিত সভা, পেছানোর সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।
অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র হাসান আহমেদ প্রশ্ন করেন, প্রক্টর মোহাম্মদ তানভীর হায়দার বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন কি না, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন যে, প্রক্টর এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, কি তাঁদের দাবি বাস্তবায়ন হলে, প্রক্টরের পদত্যাগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন এই প্রশ্নের জবাব দেন, বলেন, নির্বাচন পরিচালনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাদের।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, তিনি বলেন, ডোপ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে প্রার্থী প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে হলে ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা নেওয়া হলেও, রক্ত পরীক্ষা সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেজে চরিত্রহনন, কুৎসা প্রচার ও অপপ্রচার চলছে, যা নির্বাচনের পরিবেশ নাজুক করে তুলছে। তারা চাইছেন, নির্বাচনের সময় সাইবার সেল গঠন করে এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে। এছাড়াও, সম্প্রতি ভিন্ন গ্রাম জোবরা গ্রামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে মত আদানপ্রদান হয়।
সভার সমাপ্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, শিক্ষার্থীদের মতামত ও প্রশ্নগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ অনুযায়ী চূড়ান্ত আচরণবিধি তৈরি ও প্রকাশ করা হবে।
খসড়া আচরণবিধিতে মোট ১৭টি বিধি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনও প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে পারবে না। প্রার্থীরা পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন না। একইভাবে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র, প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য কোনও যানবাহন বা রথযান ব্যবহার নিষিদ্ধ।
নির্বাচনী বিধির ১২ নম্বর বিধির খির ধারায় বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী ও অন্য কেউ অনুমোদন ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য ಜಿಲ್ಲায়ও এই বিধি চুরি দেখা যাচ্ছে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এই প্রবেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই আলোচনা করে নেয়া হবে।