দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পাবলিক পলিসি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখতে যথার্থ সুশাসন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থিতিশীলতা এবং নীতিগত সংস্কার অপরিহার্য। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য আপনাকে অবশ্যই সুশাসন ও কার্যকর নীতি সংস্কারের উপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ সুসংহত ও স্থিতিশীল হয়।
বুধবার ভোরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি ডিসিপ্লিনের লেকচার থিয়েটারে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক একটি সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন, যেখানে মূল বক্তা হিসেবে তিনি অংশ নেন। সেখানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রকাশ করে বলেন, প্রাথমিকভাবে সংস্কারের জন্য চিন্তাধারায় দৃঢ়তা প্রয়োজন, সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে স্পষ্টভাবে এবং তার পরে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণে সমন্বয়, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং মূল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন স্বার্থের অগ্রাধিকার দেয়া হবে, সেটিও অবশ্যই সুস্পষ্ট হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, টেকসই সংস্কারের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অংশগ্রহণকারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ অতি জরুরি। বিনিয়োগের গতি বাড়াতে হবে এবং সংস্কারকে সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নেওয়া আবশ্যক। সংস্কার এককভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব না, বরং এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। এসব উদ্দেশ্যে সংস্কার জোটকে শক্তিশালী করতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি আরও গতিশীল করতে হলে সুশাসন এবং নীতিগত সংস্কারকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে গবেষণামুখী শিক্ষা চালিয়ে যেতে এবং দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে নিয়োজিত রয়েছে।
সভাপতিত্ব করেন ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. কাজী হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর শেখ শারাফাত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ জোবায়ের হোসাইন, এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ফারহানা হক ও প্রভাষক আইরিন আজহার ঊর্মি। এ সময় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে সম্মাননা ক্রেস্টও প্রদান করা হয়।
উপস্থিত ছিলেন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা, যারা এই সেমিনারে অংশ নেন। এর আগে, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিমের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপাচার্য তাঁকে স্বাগত জানিয়ে একটি মনোগ্রামসহ বিশেষ ক্রেস্ট উপহার দেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও বিভাগের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।