চলতি সপ্তাহের শুরুতে দুইদিনের ব্যাপক গণবিক্ষোভে নেপালজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, এই বিক্ষোভে কমপক্ষে ২০০ বিলিয়ন রুপির বেশি মূল্যের সরকারি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ভবন ধবংসের পাশাপাশি ঐতিহাসিক দলিলপত্র ও নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম খবরহাব।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সিংহ দরবার, পার্লামেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থাপনা নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলছে, ‘এই স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগই সংস্কারের অযোগ্য। ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো মেরামত করা সম্ভব হলেও এগুলো পুনর্নির্মাণ করতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন রুপি খরচ হবে। এই হিসেব মাত্র ভবনগুলোর জন্য নির্ধারিত, অন্য আনুষঙ্গিক খরচগুলোও এতে যোগ হয়েছে।’
নেপালে বিক্ষোভকারীরা শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে নয়, বিভিন্ন প্রদেশেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। তারা বিধানসভা ভবন, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, কারাগার, পুলিশ স্টেশন, জমির ও রাজস্ব অফিস এবং বিভিন্ন পৌর ওয়ার্ডের সরকারি ভবন পুড়িয়ে দিয়েছেন।
নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী কাঠমান্ডুতে। তবে পোখারা, ইতাহারি, জনকপুর, ধানগড়ি ও বিরাটনগরসহ অন্যান্য বড় শহরেও সরকারি অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, মঙ্গলবারের গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা শুধুমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, ব্যক্তিগত সম্পদকেও লক্ষ্যবস্তু করে। তারা রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি, ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা, পর্যটন প্রতিষ্ঠান, গাড়ির শোরুম, গণমাধ্যমের অফিসেও আগুন দিয়েছেন।
গণবিক্ষোভের সময় পুলিশ গুলি চালানোর পর সোমবার ১৯ জন নিহত হয়। এরপর থেকে আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে আগুন দিতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৪ জন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সরকারি অবকাঠামোতে ভাঙচুরের কারণে সরকারি কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ভবন পুড়ে যাওয়ায় এখন অন্যত্র কাজ চালাতে হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন রুপি বলে জানিয়েছেন সরকার, তবে এটি আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে নিশ্চিত করে নেপালের নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। বরাবরের মতো, এই পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও দুর্বল করছে।