নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, এই প্রজন্ম এখন দুর্বৃত্তায়িত ও চাঁদাবাজি রাজনীতি প্রতিরোধ করে পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরছে। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ: সংস্কার বাস্তবায়নের পথরেখা’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
মাহমুদুর রহমান মান্না সতর্ক করে বলেন, রাজনীতি যদি শুধুমাত্র মিথ্যাচার, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে পরিণত হয়, তবে তা টেকসই হবে না। তবে তিনি আশ্বাস দেন, এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে কারণ মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মতো দলগুলো এখন খুব বেশি শক্তিশালী না হলেও তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানো দেখে সবার চোখ কপাল চড়ে গেছে। ৩০-৪০ বছর আগে এসব দল যেন মাথা তুলতে কোনো শক্তি পেত না, কিন্তু এখন তারা বড় দলগুলোর জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টি দিয়ে তিনি বলেন, সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে বলছে, বর্তমানে যা বলা হচ্ছে, তার সবটাই সঠিক নয়।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ডাকসু নির্বাচন ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার চিত্র তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ এখনও প্রশ্ন করে, ভোট হয় কি না। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ডাকসু নির্বাচন সুন্দরভাবে হয়েছে, যা অনেকের জন্য অবিশ্বাস্য ছিল। ছাত্রসমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সাহস দেখিয়েছে, যা আগের প্রজন্মের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সাবেক এই ভিপি বলেন, আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ানোর সাহস পেতেন না, কিন্তু এখন তারাও সামনে আসছেন, এটিই পরিবর্তনের সূক্ষ্ম নিদর্শন। এখন আর বড় জনসভা ব্যস্ত নয়, বরং সাইবার মাধ্যমে প্রচারণা চলছে এবং নতুন প্রজন্মের ভাবনা-চিন্তা দিয়ে রাজনীতি গড়ে উঠছে। এই তরুণেরা প্রাচীন সংস্কৃতি বা সালাম-প্রটোকলকে উপেক্ষা করে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা বুঝতে পারছে, রাজনীতি অর্থাৎ আন্তরিকতা, সংগ্রাম আর অঙ্গীকার; তা লুটপাট বা ক্ষমতার শর্টকাট পথ নয়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা ভিন্ন উদাহরণ স্থাপন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধাবাদী হয়ে পড়লেও ছাত্ররা ভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য ঐক্য জরুরি, আর এই লক্ষ্যে দৃঢ়তা দরকার। সংকট নিরসনে সুপ্রিম কোর্টের রায় গ্রহণযোগ্য, যা সব পক্ষকেই মানতেই হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, রাজনীতি হালকা বিষয় নয়, এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত একটি সংগ্রাম। তাই সবাইকে সৎ এবং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি গড়ে তোলা দরকার। তাহলেই একটি উন্নত এবং অর্থবহ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
আলোচনা সভায় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করা হয়। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যদি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ডাকসু ফলের মতো ফল হয়, তবুও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, এসব নির্বাচনকে জাতীয় রাজনীতির সফলতা বা ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে দেখা উচিত নয়। ব্যাপারটি অনেকটাই অলীক আর ভাবায় বেশি কিছু নয়, কারণ দেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৬০ লাখ হলেও ভোট সংখ্যা কেবল ৩২ হাজার।
আলোচনা সভায় জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বৈরশাসনের মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়িত শাসন ব্যবস্থা স্থাপিত হয়েছে, যেখানে গুম-খুন, আয়না ঘর ও লুটতন্ত্রের বৃদ্ধি ঘটেছে। এ থেকেই উত্তরণ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো ও আইনি সংস্কার নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা উপেক্ষা করে সরকারের কিছু রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের পক্ষে সুবিধা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে ও দিদারুল ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা, যেমন গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আবু ইউসুফ সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, ও অন্যান্য নেতারা।