শুক্রবার নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে এক সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমির ও শায়খে চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম পঞ্চম দফা নির্বাচনে পিআর (প্রতিনিধি ভোটিং) সিস্টেমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, পিআর সিস্টেমের মাধ্যমে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, কালো টাকা বা পেশি শক্তির ব্যবহার চলবে না। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন দেশের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
শায়খে চরমোনাই স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাদের দাবি যদি মেনে নেন, তবে পিআর সিস্টেমে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাব। সরকারের কাছে এই Holtপদ্ধতি চালুর জন্য অনুরোধ জানাব। না মানা হলে জনগণের গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের রায় আদায় করব। তিনি মন্তব্য করেন, দেশের বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন পরিবর্তনের পেছনে বিভিন্ন জোটের স্বার্থ দেখানো হলেও বাস্তবে ভোটের পরিবর্তন হয়; কারো জন্মগত বা স্থায়ী ভোট নেই। ভোটাররা সবসময় দেখবে কার আনজর নিরাপত্তা, শান্তি, সম্পদ ও জানমালের নিরাপত্তা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে বিশাল ভোটের শক্তি রাখে। তবে ভোট কৃষকের, শ্রমিকের, সাধারণ মানুষের অধিকার। তাই ভোট কারা পাবে, তা নির্ভর করবে কার কাছে তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রয়েছে। একজন ভোটার তার জান, মাল, ইজ্জত ও পরিবারের নিরাপত্তা দেখিয়ে ভোট দিবে—অন্য কিছু নয়। ডিজিটাল যুগে এনালগ সিস্টেমের অবস্থা শেষ, এখন প্রযুক্তির যুগ। মাননীয় আওয়ামী লীগ ১৭ বছর ধরে নানা জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে মানুষের মন থেকে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি ও ধর্ষকদের কখনোই ভোট দেবে না। তারা জানে, কোন জ্ঞানী বা সচেতন ভোটার নিজের জীবন বা সম্মান বিপন্ন করতে চান না। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু অসাধু শক্তি ভোটারদের বিভ্রান্ত করে আর যারা অন্যায়-অবিচার করছে, তারা অপরাধের জাঁতাকলে আটকে আছে। অথচ সবাই জানে, এখন জুলুম-অত্যাচার আর অস্ত্রের ব্যবহার কমে গেছে। মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন চায়।
তিনি মন্তব্য করেন, খোলনায় এক সময় গুণ্ডা-খুনির আধিক্য থাকলেও এখন অশান্তি কমে গেছে। গুণ্ডামি ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষ অস্ত্র প্রতিপত্তি ছাড়াই জীবন চালিয়ে যেতে পারছে। এখন আসন্ন নির্বাচন হয় শান্তিপূর্ণ, যেখানে জনস্বার্থে ভোট দেবে সাধারণ মানুষ। দেশের টাকা চুরি, লুটপাট বা মাদক ব্যবসাও বন্ধ হবে। কোনো অন্যায় বা অবিচার চলবে না। যুবসমাজ নিরাপদে থাকবে, মাদক নির্মূল হবে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধ হবে। শতভাগ সৎচেষ্টা চালানো হবে। মা-বোনদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় নিরলস পরিশ্রম হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, দেশের প্রকৃত ভোটাররা তাদের জীবন-মাল, সম্মান ও নিরাপত্তা দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
শায়খে চরমোনাই আরও বলেন, নানা ধরণের ধোকাবাজি ও চক্রান্ত রয়েছে। যারা নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে, তারা নিজে এই মার্কার কার্যকর করতে পারে না। লাঙ্গল বা ধানের শীষের মাধ্যমে যারা নির্বাচন করে, তারা নিজেদের কাজে লাগাতে পারে না। অথচ হাতপাখা মার্কা সব শ্রেণির ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, কারণ যারা ভোট দেয় তারা এটা সহজে চালাতে পারে। এই মার্কায় ভোট দিলে দেশের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, সব মার্কা শেষ, এখন হলো হাতপাখা—শান্তির প্রতীক। মাননীয় গণতন্ত্রের এই পথে সবাই একত্রিত হয়ে দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন।
অতীতের রাজনৈতিক নেতাদের তুলনায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা আশা করেন, এই আন্দোলন দেশের সত্যিকার পরিবর্তন আনবে। খুলনা মহানগরীর সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও নগর সেক্রেটারি মুফতী ইমরান হোসাইনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন আরও অনেক নেতৃবৃন্দ, যেমন মুজিবুর রহমান শামীম, আবু তাহের, হাফেজ আব্দুল লতিফ, এড. জাহাঙ্গীর হোসেন হেলাল, মাওঃ শরীফ সাইদুর রহমান, হাফেজ শহিদুল ইসলাম, শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, মাওঃ আবু সাঈদ, আবু গালিব, শোয়াইব আহমেদ, মুফতি আরিফ বিলাহ, মাওঃ দীন ইসলাম, মোঃ ইমরান হোসেন মিয়া, মাওঃ ইলিয়াস হোসেন, মাওঃ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মোঃ তরিকুল ইসলাম কাবির।