ফিলিস্তিনসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে ঐক্যের ডাক দিয়েছে কাতার। এই আহ্বানে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তান, যা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। পাশাপাশি, পাকিস্তান বিশ্ব পরিবেশে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছে এবং সব দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হুঁশিয়ারি জারি করেছে।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে আরব নিউজ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীদের উদ্দেশ্যে কাতার যে ইসরায়েলি হামলার সম্মুখীন হয়েছে, তা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে বড় এক প্রতিবন্ধকতা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ধরনের হামলা শান্তি প্রচেষ্টায় বিঘ্ন তৈরি করছে এবং ভেতরকার নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হচ্ছে।
আসিম ইফতিখার আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে সমস্ত পক্ষের উচিত শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে মতানৈক্য সমাধান করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান এই অবৈধ ও উসকানিমূলক ইসরায়েলি আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে, যা সার্বভৌম কাতারের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।
প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলি হামলা একটি সাধারণ আবাসিক এলাকায় চালানো হয়েছে, যা অসংখ্য নিরপরাধ নাগরিকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এ ধরণের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং অঞ্চলটির শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ধ্বংসের জন্য নেপথ্যে কাজ করছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আঞ্চলিক সমাধান অসম্ভব হয়ে পড়ছে, তা স্পষ্ট।
এ সময় পাকিস্তান কাতারের সরকার ও জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করে, তাদের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় যে কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্মতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
আসিম ইফতিখার সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লংঘন, যা এই অঞ্চলে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। গাজায় নির্মম সামরিক অভিযান, সিরিয়া, লেবানন, ইরান ও ইয়েমেনে বারবার সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা— এই সবই জাতিসংঘের সংজ্ঞায় উল্লেখিত নিয়মে লঙ্ঘন।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব নম্বর ৩৩১৪ অনুযায়ী, এই ধরনের আগ্রাসন ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, আইনি শাসনকে দুর্বল করছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।
এর আগে, দোহার রাষ্ট্রপতি শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। এই বৈঠকে এই অঞ্চলে ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিকার ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীও কাতারকে পুরোপুরি সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন, এবং প্রয়োজন হলে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে, দোহায় এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলি বিমান হামনার কঠোর নিন্দা জানানো হলেও, সরাসরি এই হামলার নাম উল্লেখ না করায় পাকিস্তান উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাকিস্তানের প্রতিনিধি বলেন, এই ধরণের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক বিপজ্জনক সংকেত, এর মাধ্যমে সার্বিক অস্থিতিশীলতা বাড়ছে এবং জাতিসংঘের দুর্বল প্রতিক্রিয়া উসকে দিচ্ছে।