নিখোঁজের প্রায় ৩০ ঘন্টা পরে সুন্দরবনের ডিমের চর থেকে পর্যটক কিশোর হাফেজ মাহিত আব্দুল্লাহর (১৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ডিমের চর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত নদীতে মাছ ধরার জেলেরা মরদেহটি ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। পরে উদ্ধারকর্মীরা, সহ কোস্ট গার্ড ও বন বিভাগের সদস্যরা, দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং মরদেহটি উদ্ধার করেন। বন বিভাগের নিশ্চিত করেছেন যে নিহত মাহিত আব্দুল্লাহর মরদেহ এখনও তাদের হেফাজতেই রয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে, সাড়ে ১০টার দিকে নদীতে নেমে সাঁতার কাটার সময় আব্দুল্লাহ ঘূর্ণি স্রোতের কবলে পড়ে যান। সেসময় তিনি নিখোঁজ হন এবং এরপর থেকে তার খোঁজ চলতে থাকে। ধান্দা দিয়ে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান, যেখানে কোস্ট গার্ডের ডুবুরি দল ও বন বিভাগের সদস্যরা সক্রিয় ছিলেন।
মাহিত আব্দুল্লাহ ঢাকার মীরপুর ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক শেখ সুলতান মাহামুদ আসাদের ছেলে। তিনি মহাম্মদপুরের শেখেরটেকের বাসিন্দা। তার পরিবারের সঙ্গে আসা পর্যটকদের একটি দল, যাদের মধ্যে মোট ৭৫ জনের মতো সদস্য ছিলেন, সুন্দরবন ভ্রমণে এসেছিলেন। তারা এমভি দ্য এক্সপেরার জাহাজে করে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালী, এবং ডিমের চরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের ভ্রমণটি হঠাৎই দুঃখজনক এক দুর্ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। ঘটনার পরপরই সবাই ভ্রমণ বন্ধ করে ঢাকার পথে রওনা দেন।
পর্যটকদের একজন, মোঃ আল আমীন বলেছেন, রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মোবাইলে জানিয়েছেন, সবার মনে শোক ও হতাশা ভর করেছে। দর্শকদের একজনের নিখোঁজের খবরে তারা সবাই গভীর শোকাহত হয়ে পড়েছেন। নিখোঁজ পর্যটকের মা লিমা বেগম, তিন ভাইসহ ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে এখন থাকছেন তার বাবা, একজন বন্ধু, এবং জাহাজের দু’জন স্টাফ।
পর্যটক আল আমীন আরও জানিয়েছেন, মা লিমা বেগম ছেলেকে হারানোর শোকে জাহাজের কেবিনের দরজার সামনে কেদে কেদে 울ছেন। অন্য পর্যটকরাও এই শোকের মুহূর্তে দুঃখে ভেঙে পড়েছেন। তারা আনন্দের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাদের হৃদয় ভেঙে ফিরে যেতে হচ্ছে শোকের ছায়ায়।
শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান জানান, রবিবার বিকেল ৩টার দিকে নদীর দক্ষিণে ডিমের চর থেকে কিশোরের মরদেহ ভাসমান অবস্থায় দেখা যায়। মাছ ধরার জেলেরা এতে নজর দিয়ে উদ্ধারকারী দলের খবর দেন, যারা এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করেন।
বাগেরহাটের বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এবং এটি কোস্ট গার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
অন্যদিকে, কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মোংলা সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারকারী দল মরদেহ উদ্ধার করে মোংলার সদর দপ্তরে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।