এছাড়াও এবার আরও এক দফা বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া মাসের তথ্য অনুযায়ী, এটি প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। দেশের প্রধান চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করে বলছে, প্রকৃত চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এর জন্য অনেক শিল্পপতির বিদেশে পলায়ন এবং কারখানা বন্ধের পরিস্থিতিও বড় অবদান রাখছে। ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, তখন থেকে গত ১৫ বছরে এটি হয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে জুনের মধ্যে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। আর এক বছরেও এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে এখন প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক ঋণই আসলে খেলাপি হিসেবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে। ঋণ খেলাপির নিয়মে পরিবর্তনের ফলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, প্রাইভেট সেক্টরে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে স্বচ্ছতার অভাব ছিল, দেশের ব্যাংক খাত নিজেদের চেষ্টায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। কিছু ঋণকে আদালতের নির্দেশে আনঅ্যাকাউন্টেবল দেখানো হয়নি, কিন্তু এখন আমরা সেই সবগুলোকে স্পষ্ট করে দেখাচ্ছি। ফরেনসিক অডিটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে, তাই কিছু ঋণকে ক্লাসিফাই করে ডিফল্ট হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ গত ছয় মাসে ১০ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে ঋণ বিতরণে কিছু অনিয়মের জন্যই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনও প্রভাব দিয়ে ঋণ বিতরণ বেড়ে গেছে, এবং ঋণ সংকোচনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেই। ফলে পূর্বে যা ছিল তার চেয়েও দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য পরবর্তীতে ঋণের পরিশোধ সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো, আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।