ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম বলেছেন, যদি কোনও কারণে অন্তর্বর্তী সরকার চাপের মুখে পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থা) পদ্ধতিতে নির্বাচন না দেয়, তবে জনগণ নিজ উদ্যোগে এই পদ্ধতিতেই নির্বাচন সম্পন্ন করবে। তিনি আরও জানান, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়, কারণ তাদের উচ্চ পর্যায়ের একজন নেতা ইতিমধ্যে দাবি করেছেন, নির্বাচনে তারা শতকরা ৯০ শতাংশ ভোট পেতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে দলের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়জুল করিম বলেন, আমি মনে করি, ভারত এই লক্ষ্যটি পছন্দ করে না। এজন্য ভারতীয় আইনি বুনিয়াদ তৈরি করতে হবে। আপনাদের কি ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? অন্তর্বর্তী সরকার কেবল নির্বাচনের জন্যই নয়; এটি আসার আগে তিনটি মূল কাজ সম্পন্ন করতে হবে—সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ব্যবস্থা, এবং নির্বাচন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের জন্য পিআর পদ্ধতিই উপযুক্ত, কারণ এটি দেশের ৮০ শতাংশ জনগণের পক্ষে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তিনি জানান, পিআর পদ্ধতিতে কোনওভাবেই ফ্যাসিবাদ বা অসচ্চরিত্রতা তৈরি হবে না, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে না এবং ভোট ছিনতাইয়ের সম্ভাবনাও কমে যাবে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয় থাকবে—বাম-ডান, হিন্দু-মুসলিমসহ সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব। ফলে জনগণ রাস্তায় নামার প্রয়োজন হবে না; সকল আন্দোলন সংসদেই হবে। যদি কারও সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে গণভোটের পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে। জনগণ চাইলে, তাদের ভোটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, অন্যথায় হবে না।
মুফতি ফয়জুল করিম আরও বলেন, প্রাথমিক স্কুলে গান ও নাচের শিক্ষক নিয়োগ করা কোনওভাবেই ঠিক নয়। মুসলমানদের করের টাকায় এই ধরনের শিক্ষক নিয়োগ সুসম্পন্ন নয়, যদি কেউ দিতে চায়, তাহলে তাকে মসনদে থাকার দরকার নেই। শিক্ষকদের জন্য মূলত কম্পিউটার ও ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মিছিলের সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা উত্তর মহানগরীর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল করিম আবরার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ ইবনে কাউয়ুম, ঢাকা-১১ আসনের এমপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অংশগ্রহণকারীরা শিল্পশক্তি ও গণহত্যার বিচার কেন জরুরি, তা তুলে ধরেন। তারা বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত এবং গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। এছাড়া ভারতের তাবেদার ও ফ্যাসিবাদীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্নস্থানে চলমান রাজনৈতিক হামলা সাধারণ মানুষকে ভীতি ও উদ্বেগে ফেলেছে। এ ধরনের অরাজকতা অস্বাভাবিক এবং নিন্দনীয়। দ্রুত হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের পেছনেও অন্যান্য ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
তারা উল্লেখ করেন, স্বৈরতন্ত্রের অবসান ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার অপরিহার্য। জনগণের মতামতকে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে আনতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো আন্তঃপ্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতি। এই পদ্ধতিই দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করে আসছে। এর ধারাবাহিকতা পালন করে তারা সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
তারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই জুলাইয়ের সনদ অনুযায়ী পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব ধরনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
অতঃপর, তারা ঘোষণা দেন, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরগুলোতে ও ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলা কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে।