ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এই কর্মসূচিতে শুক্রবার অংশ নিয়েছেন শিক্ষক, ট্রেন চালক, ফার্মাসিস্ট এবং হাসপাতালের কর্মীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে। মূল কারণ হলো আসন্ন বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনা ও জনসেবা খাতে ব্যয় কমানোর উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
সংবাদে প্রকাশ, বর্তমান সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা বাতিল করতে ও জনসেবার খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য শ্রমিক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা আরও কার্যক্রমে নামছে। এর ফলে প্যারিসসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, বৃহস্পতিবার শহরটির মেট্রো সিস্টেমের বেশির ভাগ লাইন বন্ধ থাকায় ভ্রমণকারীরা দুর্ভোগের স্বীকার হন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও এই ধর্মঘটে অংশ নেয়। নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ মোতায়েনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
সিজিটি ইউনিয়নের বাস চালক ফ্রেড বলেন, বর্তমান সরকারের শ্রমিকবিরোধী মনোভাব ও অপরাধমূলক নীতির কারণে শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছে। অন্যদিকে, শিক্ষক গেয়েতঁ লেগে জানান, আমি জনসেবা রক্ষা করতে এখানে এসেছি এবং দাবি করি, দেশের অর্থনীতি যেন বড় ব্যবসায় বা ধনী ব্যক্তিদের কর ছাড়ের বদলে সাধারণ জনগণের উন্নয়নে ফিরে আসে।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন ও তার নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্টিয়ান লেকর্নু বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনা নিয়ে সংসদে বোঝাপড়া করতে গিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছেন। ইউরোজোনের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে ঘাটতির কারণে বিনিয়োগকারীরাও উদ্বিগ্ন। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীদের সূত্র জানায়, এই ধর্মঘট ও বিক্ষোভে অন্তত আট লাখ মানুষ অংশ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের প্রধান শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে, তারা পূর্ববর্তী সরকারের অবিবেচক আর্থিক নীতির নিন্দা জানাচ্ছে এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষুব্ধ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
পূর্ববর্তী অর্থ বছরের বাজেট ঘাটতি, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানদণ্ডের দ্বিগুণেরও বেশি ছিল, তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সরকার এই ঘাটতি কমাতে অপ্রতুল। নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু বাজেটের বিরোধিতায় পিছিয়ে পড়েছেন; তবে তিনি আপোসের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ব্রুনো রিটেইলিয়ো জানিয়েছেন, দেশজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রান্তে রায়টের আশঙ্কা থাকায় তারা কঠোর মনোভাব নিয়ে প্রস্তুত। ড্রোন, সাঁজোয়া যানসহ রেসপন্স টিমদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ২০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ফ্রান্সের জনস্বার্থের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ যা দেশের অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন এবং পেশাজীবীদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।