প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে এখনই পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে হবে। এতে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়তে সাহায্য করবে। গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ এক বার্তায় এ কথা জানান।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ড. ইউনূস এ বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও দীর্ঘমেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকা সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে বিকল্প ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে গুরুত্ব দেওয়া, যার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
তিনি জানান, গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের ভাই কার্ল পেজ পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তির অগ্রগতি ও হাইব্রিড সিস্টেমের উপকারিতা তুলে ধরেন। এগুলো নির্ভরযোগ্য ও শূন্য-কার্বন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সক্ষম। তিনি আরও বলেন, বার্জ ভিত্তিক পারমাণবিক চুল্লিগুলি সাশ্রয়ী, কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক।
পেজ বলেন, পারমাণবিক শক্তি আজ আর বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থাগুলোর জন্য নিষিদ্ধ নয়। ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে এবং নিজেদের জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী উদ্ভাবনী রেকর্ড থাকায় দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরমূলক পদক্ষেপে নেতৃত্ব দিতে পারে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল হবে এবং শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা বাড়বে।
পেজ আরও বলেন, বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য একটি কৌশলগত কেন্দ্র হতে পারে এবং পারমাণবিক গবেষণায় শান্তিপূর্ণ নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার এক নতুন জাতীয় বিদ্যুৎ নীতি অনুমোদন করেছে, যেখানে সৌর জ্বালানির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, পারমাণবিক বিকল্পের দিকে যাওয়ার আগে কঠোর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য। তিনি বলেন, এই সব সুযোগ অবশ্যই অনুসন্ধান করতে হবে, তবে গভীর গবেষণা ও প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিতে হবে। নিঃসন্দেহে বাংলদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসা জরুরি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সরকারের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তারা।