বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ভবিষ্যত নির্বাচন যদি পদ্ধতিগতভাবে না হয়, তবে জনগণের সত্যিকার মতামত প্রকাশ হতে পারে না। জনগণের সমতা ও সকলের প্রতিনিধিত্বের নিশ্চিতে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। তিনি আরও যোগ করেন, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে এবং সংসদে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে একমাত্র পথ।
শনিবার বিকালে রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি। এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় জুলাই সনদে সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কিছু মানুষ বলছেন, সরকার আলোচনা করছে, কেন তাহলে রাজপথে আন্দোলন করছে? তিনি স্পষ্ট করেন, একদিকে জুলাই সনদ চান, অন্যদিকে গোপনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিরপেক্ষ ও আন্তরিকভাবে আমাদের দাবিগুলো মান্য করে উপযুক্ত সমাধান করলে, আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো।
সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ক বক্তব্যে তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংস্কার কমিশন গঠনের সময় যোগসূত্র করতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী সরকারকে নির্দেশনা দিয়ে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। তবে, রাজনৈতিক বিষয় আদালতে নেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে জটিলতা বাড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা অতীতে আদালতকে ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা আর কোনওদিন চলব না।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু পক্ষ আমাদের নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি বলছে, কিন্তু জামায়াতের আমির বলছেন, ফেব্রুয়ারিই নির্বাচন করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তিনি বলেন, আমরা সময়মতো নির্বাচন চাই, কিন্তু তা অবশ্যই সাংবিধানিক সংস্কার, জুলাই সনদ, গণহত্যার বিচার, সমান সুযোগ ও পক্ষপাতিত্বমুক্ত ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষ্পত্তির মাধ্যমে হতে হবে।
গোলাম পরওয়ার জোর দিয়ে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র বিএনপিকে দেখানো হলেও আমাদের তা দেখানো হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকার এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে, যা দেখে বিএনপি খুশি হলেও আমরা কেন এতদিন এই সংস্কার নিয়ে অপেক্ষা করলাম, তার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির ব্যাপারে তিনি বলেন, দেশের ৩১টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৫টি এই পদ্ধতিতে একমত, কারণ এতে কালো টাকা, পেশিশক্তি বা কারচুপি চলে না। মনোনয়ন বাণিজ্যও এ পদ্ধতিতে হয় না। তাই এই পদ্ধতি কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে মানা মুশকিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারের জুলুম, গুম, খুন, গণহত্যা, লুটতরাজের বিচার জনগণ দেখতে চায়। সকল দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার শাসনের সঙ্গে জড়িত ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিসহ দুর্বৃত্তরাও নিষিদ্ধ হতে হবে। এই দাবি এখন জনতার জীবন্ত দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছিলেন দলের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, মহানগর সেক্রেটারি কে এম আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, সহকারী সেক্রেটারি আল-আমিন হাসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাক আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুমন সরকার ও জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ।
সমাবেশ শেষে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে শুরু করে নগরীর প্রধান সড়ক ঘুরে শাপলা চত্বরে শেষ হয়।