বাংলাদেশে আজকের দিনেও শুধুমাত্র নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সেই কারণেই কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশের (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেছেন, যারা আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা কৌশলে বিতর্ক উসকে দিতে চাচ্ছে, জাতীয় সংগীত পাল্টানোর দাবি করছে, ৭২ এর সংবিধান বাতিলের কথা বলছে এবং চার মূলনীতি মূল্যবাণ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে, তারাই আসলে গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি এ কথা বলেছেন শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সিপিবির চার দিনব্যাপী ত্রয়োদশ কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এর আগে বিকেলে জাতীয় সংগীত এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রথম দিনটি শুরু হয়। সভাপতি হিসেবে বক্তৃতা দেন সিপিবির সভাপতি।
শাহ আলম বলেন, বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা ভোগ করছে। তিনি জানান, নির্বাচন যদি না হয়, এই অচলাবস্থা চলতেই থাকবে। কিন্তু যখন নির্বাচন হয়, তখন একটি নির্দিষ্ট শক্তি ক্ষমতায় আসবে। তাই আমাদের মূল স্লোগান হলো, “অতি সত্বর নির্বাচিত সরকার দরকার।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসন তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, তবেই দেশের বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
শাহ আলমের মুখ দিয়ে উঠে আসে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রের মূল শত্রু হিসেবে বিবেচিত হলেও, এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন গণতंत्रের মোকাবিলা করছে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচনের বিরোধিতা করলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং মৌলবাদী শক্তির উত্থান আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে ২০১৩ সালে জুলির গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে, তবে সেখানে কোনও শ্রেণি বিপ্লব বা স্বাধীনতা ঘটেনি, কেবল ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে একটি গণপ্রতিরোধ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বামপন্থী, কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল শক্তির স্বজনপ্রীতি, বিভেদ ও হঠকারিতার কারণেই আজ রেডিক্যাল ইসলাম শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষকে একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বিকল্প সৃষ্টি করার আহ্বান জানান।
শাহ আলম বলেছিলেন, সিপিবির নেতৃত্বে JULY গণঅভ্যুত্থানে আমরা কোন ভুল করিনি। ওই আন্দোলনে ছিল লালবদর; সেই আন্দোলন অক্ষুণ্ণ ছিল, এবং আমাদের বিশ্বাস, এই আক্রান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, JULY-র চুক্তিপত্রের কোনও প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়, এটি চক্রান্ত। আন্দোলনের সব সম্ভাবনাকে আলোর মুখ দেখাতে হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতিও আলোচনা করে তিনি জানান, আজ পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ধ্বংস করে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের নতুন দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মানবিক করিডর তৈরি নিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের চাপ দিয়ে বার্মার সঙ্গে যুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশও ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকান ও আন্তর্জাতিক শক্তির হাতায় আমাদের দেশেও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদ্বোধনী ভাষণে লিখিত বক্তব্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন অসাংবিধানিক নীতির কারণে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ফ্যাসিস্ট ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। বিদেশি বিশ্লেষক ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির পাশাপাশি দেশের ভিতরেও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপপ্রয়াস ও সা¤প্রদায়িক হামলা, দখলদারিত্ব, নৈরাজ্য, মামলা বাণিজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব অপতৎপরতা রুখে দিতে দেশের সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও বামপন্থী সংগঠন একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শেষে, সিপিবির চার দিনব্যাপী কংগ্রেসের উদ্বোধন হয়। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ, আগামী দিনের সংগ্রাম পরিকল্পনা ও নীতিমালা নির্ধারণ করা। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শ্রমিক-কারিগর, ছাত্র-যুবা প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির শুভেচ্ছা বার্তা ও সমর্থন একত্রিত হয়। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল শক্তি একতাবদ্ধ হয়ে কৌশল নির্ধারণ করবে ভবিষ্যত সংগ্রাম জরুরি।





















