নগরীর টুটপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুস সালামকে অসাধারণ সম্মান ও রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে তাকে পাগড়ি পরানো এবং ফুলেল শুভেচ্ছায় মর্যাদাপূর্ণভাবে বিদায় জানানো হয়। তিনি দীর্ঘ ৩৭ বছর ৮ মাস ধরে মসজিদে আনুগত্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে ৮৫ বছর বয়সে অবসরে গেলেন।
শুরুতে, ১৯৮৭ সালে, তিনি টুটপাড়া জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে ইসলামের দাওয়াত ও নামাজের ইমামতি করে গেছেন। তার আগে খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে অবসর নিলেও তিনি মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে বয়সজনিত শারীরিক অসুবিধা ও দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অক্ষম হয়ে পড়ায় এবার অবশেষে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হলো তাঁকে।
বিদায়ের দিন জুমার নামাজের পর মসজিদে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের ইমামকে হারানোর দুঃখে উপচে পড়ে মুসল্লিদের চোখ। নামাজ শেষে, নিজে কণ্ঠ ভারী করে, তিনি তালেবান দোয়া করেন সকলের কাছে—‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি আর দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারছি না। আল্লাহ যেন আমাকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার তৌফিক দেন, সেই দোয়া চাই।’
এরপর, তাকে ফুল দিয়ে সজ্জিত একটি গাড়িতে করে পুরো টুটপাড়া এলাকায় শোভাযাত্রা করা হয়। মোটরসাইকেল বহরে মুসল্লিরা তাকে তার বাসায় পৌঁছে দেন। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে এলাকাবাসী একজন অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। টুটপাড়া জামে মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা মো: ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এই ইমামের কাছে পুরো এলাকা কৃতজ্ঞ। তিনি হাজার হাজার মানুষের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে গেছেন, ইসলামের পথে আহ্বান করেছেন। আমাদের সমাজে ইমামদের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না, তাই আমরা এই আয়োজনের মাধ্যমে একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করতে চেয়েছি।’
প্রায় চার দশকের ইমামতি জীবনে, মাওলানা আব্দুস সালাম শুধু মসজিদের দায়িত্ব পালন করেননি, তিনি এলাকার মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃদু স্বভাব, আন্তরিকতা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য মুসল্লিদের কাছে তিনি একজন অভিভাবকের মতো ছিলেন। এই অবসরের অনুষ্ঠানটিও তাই এক মিলনমেলায় রূপ নেয়।
টুটপাড়া জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে, মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ মোসতাক আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুফতি জিয়াউর রহমান। অনুষ্ঠানে, মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খাঁন আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে, ওয়াক্কিফা প্রতিনিধিরা এবং অন্যান্য মুসল্লিরা বক্তব্য রাখেন।