সুদানের দারফুর অঞ্চলের একটি মসজিদে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় মেডিক্যাল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করে বলছে, ভয়াবহ এই হামলাটি ঘটেছে দিনটি শুক্রবার ভোরে, দারফুরের এল-ফাশ শহরে। হামলার জন্য স্থানীয় সময় সকালে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে দায়ী করা হলেও, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর দায় স্বীকার করেনি তারা।
গত দুই বছর ধরে সুদানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাত প্রবলেম্ভভাবে চলছে। বিশেষ করে সম্প্রতি আরএসএফ শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং এল-ফাশের সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর লড়াই চালাচ্ছে। এই শহরটি দারফুরে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেখানে এখনো তিন লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক অবরুদ্ধ হয়ে জীবন বিপন্ন করছেন।
একটি প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ভোরের ফজরের নামাজের সময় ড্রোন হামলা চালানো হয়, যার ফলে বহু মানুষ প্রাণ হারান। চিকিৎসা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনার স্থান থেকে মৃতদেহ পরিষ্কারে কাজ চলছে।
বিবিসির ফুটেজ যাচাই করে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ৩০টি মরদেহ সাদা কাপড়ে ঢেকে বা কাফনের পোশাকে মোড়ানো অবস্থায় মসজিদের পাশেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এই সপ্তাহে নয়, একাধিকবার এল-ফাশে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস আক্রমণ চালাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, শহরটির কাছে অবস্থিত, বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য উত্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্র ‘আবু শৌক’ শিবিরেও ভয়াবহ হামলা হয়েছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের (এইচআরএল) স্যাটেলাইট ছবি দেখাচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রের বড় অংশ এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে, ফুটেজে দেখা গেছে, আরএসএফ সেনারা জয়েন্ট ফোর্সের সদর দপ্তরে প্রবেশ করেছে, যা আগে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পাউন্ড ছিল।
বিস্তারিত যাচাইয়ে জানা গেছে, সেনাদের উপস্থিতি সেখানে দৃশ্যত দৃশ্যমান, তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। এই অগ্রগতি হলে এল-ফাশের বিমানবন্দর ও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তর সরাসরি আরএসএফের হামলার লক্ষ্য হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরএসএফ শহরে থাকা সাধারণ লোকজনকে টার্গেট করে থাকতে পারে, কারণ অধিকাংশ বাসিন্দাই এক জাতিগোষ্ঠীর। আরএসএফ তাদের শত্রু হিসেবে দেখে।
ফ্রেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, এই সংঘাত ক্রমশ জাতিগত রূপ নিচ্ছে। দুই পক্ষই একে অপরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি জানিয়েছেন, আরএসএফ দখলকৃত এলাকায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়, এবং তারা বলে ফেলে যে, তারা কোনো গোত্রীয় সংঘাতের সঙ্গে জড়িত নয়।